বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক ২০২৩
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার
২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ ঘোষণা করা হয়।
১১টি বিভাগে মোট ১৬ জন এ পুরস্কার লাভ করেন।
পুরস্কার বিজয়ী
❐ কবিতা: শামীম আজাদ।
❐ কথাসাহিত্য: নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী
❐ প্রবন্ধ/গবেষণা: জুলফিকার মতিন।
❐ অনুবাদ: সালেহা চৌধুরী।
❐ নাটক: মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক।
❐ শিশুসাহিত্য: তপংকর চক্রবর্তী।
❐ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা: আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
❐ বঙ্গবন্ধুবিষয়ক গবেষণা: সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান।
❐ বিজ্ঞান/ কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান: ইনাম আল হক।
❐ আত্মজীবনী/ স্মৃতিকথা/ ভ্রমণকাহিনী: ইসহাক খান।
❐ ফোকলোর: তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ।
❐ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সম্মানজনক বেসামরিক পুরস্কার: একুশে পদক।
❐প্রবর্তিত: ১৯৭৬ সালে।
❐ পুরস্কার প্রদান করা হয়: ১১টি বিভাগে।
❐ ঘোষণা দেয়: সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
একুশে পদক-২০২৪: ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক (৬ জন মরণোত্তর) এর তালিকা
ক্রম ➺ব্যক্তির নাম ➺ ক্ষেত্র
❐ ১) মৌ, আশরাফুদ্দীন আহমদ (মরণোত্তর) ➺ ভাষা আন্দোলন
❐ ২) বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর) ➺ ভাষা আন্দোলন
❐ ৩) জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর) ➺ শিল্পকলা (সংগীত)
❐ ৮) বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ ➺ শিল্পকলা (সংগীত)
❐ ৫) বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর) ➺ শিল্পকলা (সংগীত)
❐ ৬) এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ➺ শিল্পকলা (সংগীত)
❐ ৭) শুভ্র দেব ➺ শিল্পকলা (সংগীত)
❐ ৮) শিবলী মোহাম্মদ ➺ শিল্পকলা (নৃত্যকলা)
❐ ৯) ডলি জহুর ➺ শিল্পকলা (অভিনয়)
❐ ১০) এম. এ. আলমগীর ➺ শিল্পকলা (অভিনয়)
❐ ১১) খান মো: মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ➺ শিল্পকলা (আবৃত্তি)
❐ ১২) রূপা চক্রবর্তী ➺ শিল্পকলা (আবৃত্তি)
❐ ১৩) শাহজাহান আহমেদ বিকাশ ➺ শিল্পকলা (চিত্রকলা)
❐ ১৪) কাওসার চৌধুরী ➺ শিল্পকলা (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামান্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইডিং)
❐ ১৫) মো: জিয়াউল হক ➺ সমাজসেবা
❐ ১৬) আলহাজ্ব রফিক আহামদ ➺ সমাজসেবা
❐ ১৭) মুহাম্মদ সামাদ ➺ ভাষা ও সাহিত্য
❐ ১৮) লুৎফর রহমান রিটন ➺ ভাষা ও সাহিত্য
❐ ১৯) মিনার মনসুর ➺ ভাষা ও সাহিত্য
❐ ২০) রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (মরণোত্তর) ➺ ভাষা ও সাহিত্য
❐ ২১) প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু ➺ শিক্ষা
একুশে পদক কী?
একুশে পদক বাংলাদেশের একটি জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও দেশের উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা সংগঠনকে সম্মানিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন এর অমর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক প্রদান করা হচ্ছে।
একুশে পদক বিজয়ী প্রত্যেককে একটি পদক, একটি সম্মাননা সনদ, একটি রেপ্লিকা এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রদান করা হয়। পদকটিতে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ নির্মিত ৩৫ গ্রাম ভরের একটি মেডেল আছে যেটির ডিজাইন করেছেন নিতুন কুণ্ডু। প্রাথমিকভাবে পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হলেও বিভিন্ন সময়ে তা বেড়ে ২ লক্ষ টাকা হয়েছে। একুশে পদক এমন একটি পুরস্কার যে এটিকে অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। এটি প্রাপ্তিতে যে প্রেরণা কাজ করে তা কোনো স্বর্ণ বা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
একুশে পদকের ইতিহাসঃ
১৯৭৬ সালে তৎকালীন শিক্ষা-সংস্কৃতি বিষয়ের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক আবুল ফজলের পরামর্শে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান একুশে পদক প্রবর্তন করেন। প্রথমবারের মত বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একুশে পদক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৬ সালে সাহিত্য, শিক্ষা ও সাংবাদিকতা – এই তিনটি বিভাগে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি জসীম উদ্দীন, বেগম সুফিয়া কামাল, ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ- খুদাসহ মোট নয়জনকে একুশে পদক দেওয়া হয়।
একুশে পদকের নীতিমালাঃ
একুশে পদকের বেশ কিছু নীতি আছে। এই নীতিমালাতে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা আছে সেগুলো দেখে নেওয়া যাক-
একুশে পদক যারা পেতে পারেনঃ
কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে প্রশংসনীয় ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য সরকার একুশে পদকে ভূষিত করতে পারে-
১) ভাষা আন্দোলন
২) শিল্পকলা (সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, চারুকলাসহ সকল ক্ষেত্র)
৩) মুক্তিযুদ্ধ
৪) সাংবাদিকতা
৫) গবেষণা
৬) শিক্ষা
৭) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
৮) অর্থনীতি
৯) সমাজ সেবা
১০) রাজনীতি
১১) ভাষা ও সাহিত্য এবং
১২) সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ক্ষেত্র।
উল্লেখিত ক্ষেত্রগুলোতে একুশে পদক দেওয়া হয় এবং একুশে পদক পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিশেষ অবদান থাকতে হবে। আবার একুশে পদক পাওয়ার জন্য ব্যক্তিকে চরিত্রগুণ ও দেশাত্মবোধে অনবদ্য হতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক জীবনের কৃতিত্ব দেখে একুশে পদক দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হবে।
একুশে পদকের নীতিমালায় বলা আছে যে, কোন বছর পনেরটির চাইতে বেশি পদক দেওয়া হবে না এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক/ প্রতিষ্ঠান/ সংস্থাই একুশে পদক নিতে পারবে। তবে সরকার ইচ্ছা করলে কোন বছর পদক এর সংখ্যা কমাতে কিংবা বাড়াতে পারে এবং যে কোন যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করতে পারে।
কমিটি গঠণঃ
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি নিয়ে একুশে পদক প্রদান সংকান্ত সাব-কমিটি গঠণ করা হয়।
কার্যক্রমঃ
কমিটি প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মাঝেই প্রাপ্ত আবেদনসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাছাই করে প্রাথমিকভাবে মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন করে। এরপর প্রাথমিকভাবে মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আবেদনের বিবরণসহ তালিকা কাগজ জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মাঝেই জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
একুশে পদক প্রদানের পদ্ধতিঃ
সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ, জেলা প্রশাসক, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিদপ্তর/ দপ্তর/ সংস্থা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একুশে পদক প্রদানের বিষয় উল্লেখ করে সংযুক্তি ছক অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহবান করা হয়। একুশে পদক পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিদের নামের প্রস্তাব বা মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মাধ্যমে প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েববসাইটে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
পূর্বে যারা একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক লাভ করেছেন তাঁরাও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বা প্রতিষ্ঠানের মনোনয়ন প্রস্তাব পাঠাতে পারেন। প্রস্তাবকদের তাঁদের প্রস্তাবিত ব্যক্তি সম্পর্কে ৩৫০ শব্দের মধ্যে সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি সংযুক্তি ছকে উল্লেখ করতে হয়।
জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একুশে পদক মনোনয়ন বাছাই সংক্রান্ত সাব-কমিটি প্রাথমিক তালিকা বাছাই করে অথবা মন্ত্রিসভা কমিটির বিবেচনায় উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে নির্বাচিত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানসমূহের নাম প্রকাশ করা হয়। তার আগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের (মরণোত্তর পদকের ক্ষেত্রে নির্বাচিত ব্যক্তির স্বামী/ স্ত্রী/ উপযুক্ত উত্তরাধিকারী) সাথে যোগাযোগ করে তাঁদের কাছ থেকে পদক গ্রহণের সম্মতিপত্র নেবে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠান পদক গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে বা নির্দিষ্ট সময়ে তাঁদের মতামত না জানালে তা মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে জানাতে হবে। ঐ ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের নাম পদকপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং তাঁদের নাম পদকপ্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে না।
যে বছর পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে সেই বছর মহামান্য রাষ্ট্রপতি/ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের হাতে পদক তুলে দিবেন।
আবার মরণোত্তর পদক প্রদানের ক্ষেত্রে পদক প্রাপক যদি একুশে পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে অপারগ হন, তবে সেক্ষেত্রে পদক প্রাপকের স্বামী বা স্ত্রী অথবা যথযথ উত্তরাধিকারী পদক গ্রহণের জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবে। কিন্তু যদি কোন পদক প্রাপক বা মরণোত্তর পদক প্রাপ্ত ব্যক্তির যথাযথ উত্তরাধিকারী পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে কোনভাবেই সক্ষম না হন, তবে তিনি পদকটি বীমাকৃত ডাকযোগে বা অন্য কোন অনুমোদিত মাধ্যমে তাঁর কাছে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতে পারবেন।
একুশে পদকের জন্য সাব কমিটি কর্তৃক মনোনীত সুধীবৃন্দ/ প্রতিষ্ঠানের নাম জাতীয় পুরষ্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পর যেসকল সুধী/ প্রতিষ্ঠান ঐ বছর একুশে পদক প্রাপ্ত হননি, তাঁদের নাম পরের বছরের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হবে।
একুশের মহান চেতনাকে তাৎপর্যপূর্ণ করার পাশাপাশি আমাদের সৃজনশীল ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের জন্য একুশে পদক প্রবর্তন করা হয়েছিল। জাতির কৃতী সন্তানরা তাঁদের মেধা আর কর্মের মাধ্যমে আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। এবং তাঁরা এই ক্ষেত্রগুলোতে অসামান্য অবদান রেখে একুশে পদকে ভূষিত হয়ে বায়ান্নর সেই ভাষা আন্দোলন আর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান চেতনা উজ্জ্বীবিত করে রাখছেন। আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ যেমনটা আমরা চিরকৃতজ্ঞ আমাদের মহান ভাষাশহীদদের প্রতি।