বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির ভূমিকায় রেমিট্যান্স নাকি গার্মেন্টস

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তির ভূমিকায় রেমিট্যান্স নাকি গার্মেন্টস!
আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারনা রয়েছে যে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার মূল চালিকা শক্তি গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্প এবং তা থেকে হওয়া রপ্তানি আয় অথচ গত চার দশকের অগ্রগতি দেখলে বোঝা যায় দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া বা হুন্ডিপ্রাক্রিয়ায় তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে , ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস ও কর্মরত আছে । এই সকল অভিবাসী যদি কর্মহীন থাকতো তাহলে দেশের অর্থনীতি কতটা ভয়াবহ হতো এবং বেকারত্ব সমস্যা প্রকট আকার ধারন করত ।
স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের সময় বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ‘আন্তর্জাতিক বাস্কেট কেস’ হিসেবে।কারণ জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি। অপরদিকে ২০২২ সালে জনসংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ১৭ কোটি। অথচ জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির হার ২.৪ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১.১২ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধির হার কমানোর ক্ষেত্রে অভিবাসন ভূমিকা পালন করেছে । অথচ দেশে প্রতিবছর কর্মসংস্থান হচ্ছে মাত্র ৭-৮ লাখ বেকারের। যেখানে বেকারের সংখ্যা ২৫-২৭ লাখ। বিদেশে কর্মসংস্থান বাংলাদেশের জন্য ‘সেফটি বাল্ব’।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এবং সিংহভাগ তথা ২১ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলার আসে হুন্ডিপ্রক্রিয়ায় এবং ১ কোটি টাকার বেশি আমানত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক বিনিয়োগ যে ভূমিকা পালন করেছে । তার অনুরুপ ভূমিকা পালন করেছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহ ।
পোশাকশিল্পের দ্রুত প্রসারও দেশের অর্থনীতিকে প্রশংসনীয় ভাবে গতিশীল করে তুলেছে।গত ৪৫ বছরে বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে জায়গা দখল করেছে।
১৯৮০-৮১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৭৫ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫.৫৬ বিলিয়ন ডলারে , যার ৮৪ শতাংশ আসছে তৈরি পোশাক থেকে । এর মধ্যে নিটওয়্যার রপ্তানি থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার এবং ওভেন গার্মেন্টস রপ্তানি থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার ।
অবশ্য মনে রাখতে হবে পোশাক শিল্প খাতে প্রায় ৩০ লাখ নারীর কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি বড়সড় সামাজিক বিপ্লবের সূচনা হয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্পের অবদানকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ বলতেই হবে৷
কিন্তু রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রেখেই চলেছে।