Combine job preparation (10-20)
📘 কোর্সের নাম: কম্বাইন্ড চাকরি প্রস্তুতি (১০-২০ গ্রেড) 📝 কোর্স বিবরণ: এই কোর্সটি বাংলাদেশ সরকারের…
📘 কোর্সের নাম: কম্বাইন্ড চাকরি প্রস্তুতি (১০-২০ গ্রেড) 📝 কোর্স বিবরণ: এই কোর্সটি বাংলাদেশ সরকারের…
📝 কোর্স বিবরণ: এই কোর্সটি বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি…
Description: 48 BCS Preparation exam batch-26 কোর্সের বর্ণনা আমাদের অনলাইন বিসিএস প্রিলী প্রস্তুতি কোর্সটি বিশেষভাবে…
🎓 কোর্সের বর্ণনা আমাদের অনলাইন প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতি কোর্সটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে প্রার্থীদের…
Right forms of verbs গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো 1. Present Indefinite Tense এর subject যদি…
❐ শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে: ➺ ১০২তম ❐ বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে: ➺ ৭৫তম ❐ বৈশ্বিক ক্ষুধা…
2024 সালের বিভিন্ন পুরুষ্কার : নবেল পুরস্কার ২০২৩ 🏆 চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার ২০২৩ বিজয়ীদের তালিকা…
গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন-বৈঠক-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন-বৈঠক-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে ❐ ১৬তম ব্রিকস সম্মেলন ২০২৪ কোথায় অনুষ্ঠিত…
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ ঘোষণা করা হয়।…
New Microsoft PowerPoint Presentation
চর্যাপদ আবিষ্কারের পূর্বে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের শুরুটাই প্রাচীন যুগ হিসেবে বিবেচিত হত। বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা মধ্যযুগের প্রাথমিক সীমা নির্দেশ করে। দ্বাদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অর্থাৎ মুসলমান রাজত্বকালে রচিত সাহিত্যকে মধ্যযুগের সাহিত্য বলা হয়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের শুরুতে মুসলমানদের বিজয়ের ফলে ১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রি. পর্যন্ত প্রচলিত সংস্কৃতিতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে তাতে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচিত হয় নি বলে এ সময়কালকে বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ বলে। ১৩৫০ সালের পরবর্তী সময়ে বাংলা কাব্যের দুটি প্রধান ধারা পরিলক্ষিত হয়। একটি হলো কাহিনীকাব্য; অপরটি হলো গীতিকাব্য। প্রথম ধারার কাহিনি কাঠামোর মধ্যে সংগীতধর্মীতা লক্ষণীয়। দ্বিতীয় ধারার প্রধান লক্ষণ সংগীতধর্মিতা ও ভাবধর্মিতা। বড়ু চন্ডীদাস রচিত বাংলা সাহিতের মধ্যযুগের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্যের নাম “শ্রীকৃষ্ঞকীর্তন” ।
মধ্যযুগের কাব্যধারার প্রধান ধারা ৪টি। এগুলো হলো –
মধ্যযুগের সাহিত্যকর্মগুলো নিম্নোক্ত পর্যায়ে বিভক্ত –
‘অন্ধকার যুগ’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ । খ্রিষ্টীয় ১২০০ সাল থেকে পরবর্তী প্রায় দেড়শ বছর বাংলা সাহিত্যের কোনো উল্লেখযোগ্য নিদর্শন না পাওয়ায় ঐতিহাসিকগণ ঐ সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন । এই হিসেবে ১২০০ সাল থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত মোট দেড়শ বছর হলো অন্ধকার বা তমসার যুগ। তুর্কী আক্রমণকারীদের ভয়ে বৌদ্ধ কবিগণ বঙ্গদেশ থেকে নেপালে শরণার্থী হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এ কারণে বাংলা সাহিত্যজগতে শূন্যতা দেখা দেয় ।
বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয়ের ফলে বাংলার প্রচলিত ধর্মীয় সংস্কৃতির বড় রকমের পরিবর্তন ঘটে । রাজনৈতিক অব্যবস্থা চলতে থাকে । ব্রাহ্মণ ও বৌদ্ধশক্তির নেতৃত্ব চলে যায় মুসলমানদের হাতে। নেতৃত্ব পরিবর্তনে সাময়িকভাবে সৃষ্ট এই বিমূঢ় অবস্থার প্রেক্ষিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সাহিত্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এসব কারণে ‘চর্যাপদ’ বা ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এর মত সাহিত্যগুণসম্পন্ন বাংলা রচনা না পাওয়া গেলেও অনেক ঐতিহাসিক ‘অন্ধকার যুগ’ এর ধারণাটিকে স্বীকার করেন না । তাঁরা ১২০১ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত সময়কে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন ।
এ সময়ের কিছু কিছু রচনা আমরা পেয়ে থাকি। রামাই পণ্ডিত রচিত ‘শূন্যপুরাণ’ এবং ‘কলিমা জালাল’ বা ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’, ‘ডাক ও খনার বচন’; হলায়ুধ মিশ্রের ‘সেক শুভোদয়া’র অন্তর্গত পীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক বাংলা ‘আর্যা’ বা গান প্রভৃতি এ সময়ের বাংলা সাহিত্য সৃষ্টির নমুনা হিসেবে উল্লেখযোগ্য । খনার বচনে কৃষি ও আবহাওয়া এবং ডাকের বচনে জ্যোতিষ ও মানব চরিত্রের ব্যাখ্যা প্রাধান্য পেয়েছে।
ধর্মপূজা বিধানের প্রথমাংশে পূজার বিষয় এবং বৃহত্তর দ্বিতীয়াংশে ধর্মের অর্চনা, ব্রত-নিয়ম, উপচার প্রভৃতি বর্ণিত। শূন্যপুরাণে ও ধর্মপূজাবিধানে ‘নিরঞ্জনের উষ্মা’ বা বড় জালালি কলিমা এবং শেষোক্ত গ্রন্থে ছোট জালালি রয়েছে। ব্রাহ্মণ্যসমাজের ঘৃণা এবং পীড়নপৃষ্ট বিলুপ্তপ্রায় বৌদ্ধ সমাজ প্রতিকার-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সামর্থ্য হারিয়ে তুর্কিবিজয়কে ধর্মের আশীর্বাদরূপে জেনে হিন্দুর পরাজয়ে ও দুর্দশায় উল্লাসবোধ করে। পরকে ডেকে ঘরের শত্রুকে জব্দ করার নীতি দুর্বল মানুষের নতুন নয় ।
ছোট জালালিতে রয়েছে বিজেতার ধর্মমত বুঝবার চেষ্টা। এই বিজাতি বিধর্মী শাসকদের ও তাদের দেশজ স্বধর্মীর সঙ্গে সহাবস্থানের জন্যে তা প্রয়োজন। সেক শুভোদয়া, ছোট জালালি, পীর পাঁচালি একই উদ্দেশ্যে রচিত। প্রথম দিকে রামাই পণ্ডিতের পীড়ক ছিল হিন্দু। সতের আঠারো শতকে যবন সুলতান এবং উনিশ-বিশ শতকে বাঙালি হিন্দুর পীড়ক হলো ব্রিটিশ, তখন তারা হয় ব্রিটিশ বিদ্বেষী ।
রামাই পণ্ডিত রচিত ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ শূন্যপুরাণ। শূন্যপুরাণ ধর্মীয় তত্ত্বের গ্রন্থ – গদ্য পদ্য মিশ্রিত চম্পুকাব্য। এ গ্রন্থে ৫১টি অধ্যায় রয়েছে যার প্রথম ৫টিতে সৃষ্টিতত্ত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে বৌদ্ধদের শূন্যবাদ এবং হিন্দুদের লৌকিক ধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে। এতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সদ্ধর্মীদের ওপর বৈদিক ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ কবিতায় ব্রাহ্মণ্য শাসনের বদলে মুসলিম শাসন প্রচলনের পক্ষে মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ুদ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ সংস্কৃত গদ্য-পদ্যে লেখা চম্পুকাব্য। লক্ষণ সেনের অপর বিখ্যাত কবি হলেন জয়দেব। শেখের শুভোদয় অর্থাৎ শেখের গৌরব ব্যাখ্যাই এই পুস্তিকার উপজীব্য। এ গ্রন্থে মুসলমান দরবেশের চরিত্র ও আধ্যাত্মশক্তির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এটি বাংলা ভাষায় পীর মাহাত্ম্য-জ্ঞাপক কাব্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। ‘সেক শুভোদয়া’ গ্রন্থের প্রেমসঙ্গীতটিকে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র প্রেমসঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ত্রয়োদশ শতকেই সঙ্কলিত হয়েছিল প্রাকৃত ভাষায় রচিত গীতিকবিতার একটি মহাসঙ্কলন ‘প্রাকৃতপৈঙ্গল’।
ব্রাহ্মণ্য আশ্রিত হওয়ার পর ব্রাহ্মণ্য দেবতার আদলে ও আবরণে ধর্ম ঠাকুরের পূজাপদ্ধতি ও মাহাত্ম্য যিনি নতুন করে প্রচার করেন তিনি রামাই পণ্ডিত। জিন মহাবীর যেমন তাঁর পূর্বেকার তেইশজন তীর্থংকর স্বীকার করেছেন। গৌতম বুদ্ধ যেমন তাঁর পূর্বেকার বোধিসত্ত্বের কথা বলেছেন, তেমনি লোকগ্রাহ্য করবার জন্য রামাই পণ্ডিতও তাঁর আগে তিন যুগে তিন জন ধর্মপূজা-প্রবর্তক যুগাবতার স্বীকার করেছেন । এঁরা হলেন – সত্যযুগের শেতাই, ত্রেতাযুগের নীলাই, দ্বাপরের কংসাই এবং মেহেদীর মতো তাঁর পরেও একজন অবতার আসবেন, তাঁর নাম হবে গোঁসাই।
রামাই পণ্ডিত তের শতকের প্রথম দিকে ধর্মপূজাপদ্ধতি প্রচার করেন। তাঁর ‘আদি শূন্যপুরাণ’ তেরো শতকের গোড়ার দিকের রচনা। তিনি ডোমবংশীয় পণ্ডিত। তিনি জাজপুর বা উড়িষ্যার অধিবাসী ছিলেন। শূন্যপুরাণের গ্রন্থোক্ত নাম ‘আগমপুরাণ’। শূন্যপুরাণ সম্পাদক প্রদত্ত নাম ।
আরো জানতে পড়ুন:শূন্যপুরাণের সৃষ্টিতত্ত্ব
সর্বজনস্বীকৃত খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত মধ্যযুগের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হলো ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। গ্রন্থটির রচয়িতা মধ্যযুগের আদি বা প্রথম কবি বড়ু চণ্ডীদাস। ভাগবতের কৃষ্ণলীলা সম্পর্কিত কাহিনী অনুসরণে, জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের প্রভাব স্বীকার করে, লোকসমাজে প্রচলিত রাধাকৃষ্ণ প্রেম-সম্পর্কিত গ্রাম্য গল্প অবলম্বনে কবি বড়ু চণ্ডীদাস ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য রচনা করেন। বড়ু চণ্ডীদাস আনুমানিক চতুর্দশ শতকের কবি। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল অনন্ত। হাতে লেখা পুঁথিখানির প্রথমে দুটি পাতা, মাঝখানে কয়েকটি পাতা ও শেষে অন্তত একটি পাতা নেই। গ্রন্থশেষে কয়েকটি অলিখিত সাদা পাতা আছে। পুঁথিখানিতে গ্রন্থের নাম, রচনাকাল ও পুঁথি-নকলের তারিখ কিছুই নেই।এজন্য কবির পরিচয়,গ্রন্থনাম ও রচনাকাল অংশ পাওয়া যায় নি। তবে পুঁথির সাথে একটি চিরকূট পাওয়া গিয়েছে, তাতে ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’ বলে একটা কথা লিখিত আছে। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামটি প্রদান করেন সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে (১৩১৬ বঙ্গাব্দ) শ্রী বসন্তরঞ্জন রায় পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বনবিষ্ণুপুরের কাঁকিল্যা গ্রামে ভ্রমণকালে দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক গৃহস্থের গোয়ালঘরের টিনের চালার নিচ থেকে পুঁথি আকারে অযত্নে রক্ষিত এ কাব্য উদ্ধার করেন। বসন্তরঞ্জন রায় সম্পাদনার পর ১৯১৬ সালে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে এটি প্রকাশ করে (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে) তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেন। বৈষ্ণব মহান্ত শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশজাত দেবেন্দ্ৰনাথ মুখোপাধ্যায়ের অধিকারে গ্রন্থটি রক্ষিত ছিল । বর্তমানে এটি ২৪৩/১, আচার্য প্রফুল্ল রায় (কলকাতা) রোডের বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পুঁথিশালায় সংরক্ষিত আছে। বসন্তরঞ্জন রায়ের উপাধি ছিল ‘বিদ্বদ্বল্লভ’। ভুবনমোহনের অধ্যক্ষ তাঁকে এ উপাধি দেন।
রচনাকালের দিক থেকে বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় গ্রন্থ হলো শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য। এর রচনাকাল চতুর্দশ শতক। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৩৪০-১৪৪০ সালের মধ্যে রচিত। এটি নাট-গীত (গীতি-নাট্য) ভঙ্গিতে তের খণ্ডে রচিত। সমস্ত কাব্যে মোট তিনটি চরিত্র আছে -রাধা, কৃষ্ণ ও বড়ায়ি। কাব্যটির বিষয়স্তু হলো রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলা। মর্তবাসী রাধা ও কৃষ্ণের প্রকৃত পরিচয় বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষীদেবী ও বিষ্ণু।
বড়ু চন্ডীদাস লোকসমাজে প্রচলিত রাধা-কৃষ্ঞের প্রেম সম্পর্কিত গ্রাম্য গল্প অবলম্বনে ৪১৮ টি পদ,১৬১ টি শ্লোক ও ১৩টি খন্ডের মাধ্যমে পঞ্চদশ শতাব্দীতে ‘শ্রীকৃষ্ঞকীর্তন’ কাব্য রচনা করেন।‘শ্রীকৃষ্ঞকীর্তন’ মূলত যাত্রাপালা ছিল বলে মনে করা হয়। কারণ কাব্যটি সংস্কৃত গীতগোবিন্দের অনুরুপ গীতি এবং সংলাপবহুল নাট্যলক্ষণাত্নক রচনা বলে অনেক পন্ডিত একে নাট্যগীতিকাব্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ড. বিমানবিহারী মজুমদার একে ‘রাধাকৃষ্ঞের ধামালী’ বলে অভিহিত করেছেন। ধামালী কথাটির অর্থ- রঙ্গরস,পরিহাস বাক্য, কেীতুক। রঙ্গ তামাসার কালে কপট দম্ভ প্রকাশ করে যে সব উক্তি করা হয়, প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে তাকে ধামালী বলে। নাটপালায় এরুপ ধামালী হাস্যরসের উপাদানরুপে ব্যবহৃত হয়। এ কাব্যে মোট বারটি স্থানে ধামালী কথাটির প্রয়োগ আছে।
আরো জানতে পড়ুন:শ্রীকৃষ্ঞকীর্তন কাব্যের সংক্ষিপ্ত কাহিনী
মঙ্গল শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো কল্যাণ। ধারণা করা হতো যে, এ কাব্য রচনা, পাঠ বা শ্রবণ করলে মানুষের কল্যাণ সাধন হয় । মধ্যযুগে বিভিন্ন লৌকিক দেব-দেবীর মহিমা ও মাহাত্ম্যকীর্তন এবং পৃথিবীতে তাদের পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী নিয়ে যেসব কাব্য রচিত হয়েছে, সেগুলোই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত। কারো কারো মতে, দেবতাদের কাছে মঙ্গল কামনা করে এ কাব্যগুলো রচিত হয়েছিল বলেই এগুলোর নাম মঙ্গল কাব্য। মঙ্গলকাব্য সমূহের বিষয়বস্তু মূলত ধর্ম বিষয়ক আখ্যান। এটি দেব- দেবীর মহিমা ও মাহাত্মকীর্তননির্ভর কাব্য। দেবতাদের নামানুসারে মঙ্গলকাব্যগুলোর নামকরণ হতো।
মঙ্গল কাব্য পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে রচিত হয়েছিল। পৌরাণিক, লৌকিক ও পৌরাণিক-লৌকিক সংমিশ্রিত, দেবদেবীর লীলামাহাত্ম্য, পূজা প্রচার ও ভক্তকাহিনী প্রভৃতি অবলম্বনে রচিত ।সম্প্রদায়গত প্রচারধর্মী ও আখ্যানমূলক কাব্য হলো মঙ্গল কাব্য। বিভিন্ন দেবদেবীর গুণগান এবং পূজা প্রতিষ্ঠার কাহিনী মঙ্গল কাব্যের উপজীব্য। (মতান্তরে প্রকাশ, মঙ্গল কাব্য এক মঙ্গলবারে শুরু হত এবং পরবর্তী মঙ্গলবারে শেষ হত। এ মতামত খুব বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।)
মঙ্গলকাব্য প্রধানত দুই প্রকার। যথা- পৌরাণিক মঙ্গলকাব্য ও লৌকিক মঙ্গল কাব্য । কয়েকটি পৌরাণিক মঙ্গল কাব্য- অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল, গৌরীমঙ্গল ইত্যাদি। কয়েকটি লৌকিক মঙ্গলকাব্য— চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, শিবায়ন বা শিবমঙ্গল, শীতলামঙ্গল, রায়মঙ্গল, কালিকামঙ্গল, সারদামঙ্গল, ইত্যাদি । লৌকিক দেব-দেবীদের গুণগান করাই মঙ্গলকাব্যের উদ্দেশ্য। তবে ‘মঙ্গল’ কথাটি থাকলেও চৈতন্যমঙ্গল’ ‘গোবিন্দমঙ্গল’ এগুলো মঙ্গলকাব্য ধারার অন্তর্ভুক্ত নয় । এগুলো বৈষ্ণব সাহিত্যের অংশ।
মঙ্গল কাব্যের প্রধান শাখা ৩টি – –
১। মনসামঙ্গল কাব্য
২। চণ্ডীমঙ্গল কাব্য
৩। অন্নদামঙ্গল কাব্য
মঙ্গল কাব্যের অপ্রধান ধারা দুটি –
১। ধর্মমঙ্গল কাব্য
২। শিবমঙ্গল কাব্য / কালিকা মঙ্গল কাব্য ।
যে কোনো মঙ্গলকাব্যে পাঁচটি অংশ থাকবে
১। বন্দনা
২। আত্মপরিচয় ও গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ
৩। দেবখণ্ড
৪ । মতখণ্ড
৫। ফলশ্রুতি
মঙ্গলকাব্যের মূল উপজীব্য হলো দেবদেবীর গুণগান। এ কাব্যে স্ত্রীদেবতাদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মঙ্গলকাব্যে মনসা ও চণ্ডী এই দুই দেবতারই প্রাধান্য বেশী। মধ্যযুগে অনেকে মঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন। ড. দীনেশ চন্দ্ৰ সেন এদের সংখ্যা ৬২ জন বলে উল্লেখ করেছেন। আদি মঙ্গলকাব্য হচ্ছে মনসামঙ্গল। এটি মনসা দেবীর কাহিনি নিয়ে রচিত। এর অপর নাম ‘পদ্মপুরাণ’ ।
আরো জানতে পড়ুন:মধ্যযুগের সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্যকর্ম
বাংলা সাহিত্যে মঙ্গল কাব্য ধারায় প্রাচীনতম ধারা হলো মনসামঙ্গল কাব্য। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মঙ্গল কাব্যধারায় মনসা দেবীর পূজা প্রচার এবং দেবী মনসার গুণকীর্তন রূপায়িত হয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যে। সর্পের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসার লৌকিক ভয়ভীতি থেকেই এ দেবীর উদ্ভব।। মনসামঙ্গলের অধিকাংশ কবির বাড়ি পূর্ববঙ্গে। মনসামঙ্গল কাব্য আটদিনে গাওয়া হতো, কাব্যের শেষদিনে গাওয়া অংশকে সংক্ষেপে ‘অষ্টামঙ্গল’ বলা হতো। নিয়তির বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ এ কাব্যকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। মঙ্গলকাব্য / মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি (কানা) হরিদত্ত। (কানা) হরিদত্ত, বিজয় গুপ্ত, দ্বিজ বংশীদাস, বিপ্রদাস পিপলাই, কেতকা দাস ক্ষেমানন্দ মনসামঙ্গল কাব্যধারায় পনের শতকের কবি।
হরিদত্ত পুরো কাব্য রচনা করেছিলেন কি না নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তাঁর পুথি পাওয়া যায় নি – বোধ করি আর পাওয়া যাবে না। তাঁর রচনা হারিয়ে গেছে অন্য কবিদের রচনার ভেতরে। বিজয়গুপ্ত হরিদত্তকে মূর্খ ও ছন্দোজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাপ্ত পদগুলো এ মত সমর্থন করে না। হরিদত্ত তত্ত্বজ্ঞানী ছিলেন বলে তাঁর পদে উল্লেখ করা হয়েছে। মনসা কাহিনীর যে কাঠামো ও বিষয় তিনি ঠিক করেছেন তা কয়েক শ’ বছর ধরে অনুসৃত হয়েছে। এটা তাঁর মৌলিক প্রতিভার পরিচায়ক। তাঁর রচিত একটি পঙ্ক্তি :
নীল নাগে দেবী বান্ধিল কেশপাশ ।
অঞ্জনিয়া নাগে করে অঞ্জন বিলাস ৷৷
বাসুকি তক্ষক দুই মুকুট উজ্জ্বল।
এলাপাত্র নাগে করিল তোড়লমল ৷৷
————-
দর্পণ হাতে করি দেবী বেশ বানায়।
মনসার চরণে লাচাড়ী হরি দত্তে গায় ৷৷
মনসামঙ্গল কাব্যের প্রতিনিধিস্থানীয় ও শ্রেষ্ঠ কবি হলেন- বিজয় গুপ্ত । তিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম সুস্পষ্ট সন-তারিখযুক্ত মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা। তাঁর রচিত মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থের একটি অংশের নাম ‘পদ্মপুরাণ’। বরিশাল জেলার ফতেহাবাদ মুল্লুকের বাঙ্গরোড়া তকসিমের প্রাচীন ফুল্লশ্রী গ্রামে তাঁর নিবাস ছিল (বর্তমান গৈলা গ্রাম) । গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘাঘর এবং পূর্ব দিক দিয়ে ঘণ্টেশ্বর নদী প্রবাহিত হতো। কবির পিতা ছিলেন সনাতন এবং মাতা রুক্মিণী। তাঁরা ছিলেন বৈদ্যবংশজাত । শ্রাবণ মাসের মনসাপঞ্চমীতে স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে ১৪৯৪ সালে তিনি কাব্য রচনায় প্রবৃত্ত হন। তাঁর কাব্যে কালজ্ঞাপক নিচের চরণটি পাওয়া যায় :
ঋতুশূন্য বেদ শশী পরিমিত শক।
সুলতান হোসেন সাহা নৃপতি তিলক॥
কবি নারায়ণ দেব মনসামঙ্গলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তার উপাধি ছিল ‘সুকবি বল্লভ’। তিনি বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার বোর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষ উদ্ধারণদেব রাঢ় থেকে সেখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং উত্তরপুরুষেরা এখনো সেখানে রয়েছেন। কবির পিতার নাম নরসিংহ এবং মাতা রুক্মিণী। তাঁকে পনের শতকের কবি বলাই যুক্তিসংগত। নারায়ণদেব রচিত গ্রন্থের নাম ‘পদ্মপুরাণ’। বন্দনা, আত্মপরিচয়, দেবখণ্ড ও নরখণ্ড চতুর্বিধ লক্ষণই এতে রয়েছে। দেবখণ্ড সবচেয়ে বিস্তৃত । সে অংশের পৌরাণিক কাহিনী তিনি বাংলা ভাষায় হাজির করেছেন। তিনখণ্ডে বিভক্ত এ কাব্যগ্রন্থটির প্রথম খণ্ডে কবির আত্মপরিচয় ও দেব বন্দনা, দ্বিতীয় খণ্ডে পৌরাণিক কাহিনী এবং তৃতীয় খণ্ডে চাঁদ সওদাগরের সংক্ষিপ্ত কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যকে করুণ রসের আকর বলা হয়। বাংলাদেশ অপেক্ষা আসামে নারায়ণদেবের ‘পদ্মপুরাণ’ অধিক প্রচলিত ।
কবি বিপ্রদাস পিপিলাই ১৪৯৫ সালে ‘মনসাবিজয়’ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। চব্বিশ পরগণা জেলার নাদুড্যা (পাঠান্তরে বাদুড্যা) ছিল বিপ্রদাসের নিবাস, যা বর্তমান চব্বিশ পরগনার বসিরহাট মহকুমার রাদুড়িয়ার নিকটবর্তী বড়গাঁ হিসেবে পরিচিত। তাঁর পিতা মুকুন্দ পণ্ডিত ছিলেন সামবেদীয় ব্রাহ্মণ ও পিপিলাই গাঞির। সেজন্য কবির নাম বিপ্রদাস পিপিলাই ।
কবি দ্বিজ বংশীদাস কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মনসামঙ্গলের কাহিনীকে কিছুটা স্বাতন্ত্র্য রূপ দান করেন। তাঁর পিতা-মাতার নাম যাদবানন্দ ও অঞ্জনা। সুলোচনা তাঁর স্ত্রী ও কন্যা চন্দ্রাবতী। কবি বিভিন্ন শাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন ও বাড়িতে টোল চালাতেন। । শেষ জীবনে ধর্মসাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মনসার গান লিখে ও গেয়ে জীবিকা অর্জন করতেন। সাধুচরিত্র ও মিষ্টকণ্ঠ তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা দিয়েছিল, তবে আর্থিক স্বচ্ছলতা দেয়নি। চন্দ্রাবতীর ভাষায় :
ঘরে নাই ধান চাল, চালে নাই ছানি ।
আকর ভেদিয়া পড়ে উচ্ছিলার পানি ৷৷
কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ মনসামঙ্গলের একজন জনপ্রিয় কবি। ক্ষেমানন্দ কবির নাম, কেতকাদাস উপাধি। ক্ষেমানন্দ মঙ্গলকাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কাব্যে মুকুন্দরাম ও রামায়ণ কাহিনীর প্রভাব সুস্পষ্ট। তিনি হুগলী জেলার কেতেরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রকাশভঙ্গি এবং সামাজিক রীতিনীতি ও ভৌগোলিক স্থানের বিশদ বর্ণনা কাব্যকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
মনসামঙ্গলের জনপ্রিয়তার জন্য বিভিন্ন কবির রচিত কাব্য থেকে বিভিন্ন অংশ সংকলিত করে যে পদসংকলন রচনা করা হয়েছিল তাই বাংলা সাহিত্যে বাইশ কবির মনসামঙ্গল বা বাইশা নামে পরিচিত। চরিত্র : চাঁদ সওদাগর, বেহুলা, লখিন্দর।
বিপন্ন নায়ক নায়িকা চেীত্রিশ অক্ষরে ইষ্টদেবতার যে স্তব রচনা করে তাকে বলে চেীতিশা।ব্যঞ্জনবর্ণ ( ক থেকে হ পর্যন্ত ) পদের আদিতে প্রয়োগ করে চৌতিশা রচিত হত।
বারোমাসী বা বারোমাস্যা শব্দের অর্থ পুরো এক বছরের বিবরণ। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের লেীকিক কাহিনি বর্ণনায় নায়ক-নায়িকাদের বারো মাসের সুখ-দুঃখের বিবরণ প্রদানের রীতি দেখা যায়, একেই বারোমাসী বা বারোমাস্যা বলে।
আরো জানতে পড়ুন:মনসামঙ্গলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী
মনসামঙ্গলের পর অন্যতম জনপ্রিয় ধারা হলো চণ্ডীমঙ্গল কাব্য। এটি মঙ্গল কাব্যধারার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। চণ্ডী দেবীর পূজা প্রচারের কাহিনী অবলম্বনে যে কাব্য রচিত হয় তাই চণ্ডীমঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত। দেবী চণ্ডীর গুণকীর্তন রয়েছে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে। উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হলো: কালকেতু, ফুল্লরা, ধনপতি, খুল্লনা, লহনা, ভাড়ু দত্ত, মুরারীশীল।
চণ্ডীমঙ্গলের আদি কবি হলেন মানিক দত্ত। পূর্বসূরীদের বন্দনা করতে গিয়ে চণ্ডীমঙ্গলের বিখ্যাত কবি কবিকঙ্কন এক মানিক দত্তের নামোল্লেখ করেছেন- ‘যাহা হৈতে হৈল গীতপথ-পরিচয়/বিনয় করিয়া কবিকঙ্কণে কয় ।’ এই মানিক দত্তই চণ্ডীমঙ্গলের আদি কবি। তাঁর মূল রচনা পাওয়া যায়নি, তবে বেশ কয়েকটি খণ্ডিত অনুলিপি সংগৃহীত হয়েছে।
মানিক দত্ত ছিলেন মালদহ জেলার অধিবাসী। বর্তমান মালদহ জেলার চার মাইল দক্ষিণে ফুলবাড়ি এলাকায় কবির জন্ম। তিনি আনুমানিক চতুৰ্দশ শতকের কবি। তিনি কানা-খোঁড়া ছিলেন। তবে দেবীর অনুগ্রহে তিনি ভালো হয়ে যান। তিনি যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষিত না হলেও দেবীর কৃপায় পুঁথি রচনা করেন। তাঁর কাব্যের নাম ‘চণ্ডীমঙ্গল’।
‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের প্রধান কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তিনি ষোল শতকের কবি। মুকুন্দরাম চক্রবর্তী সমকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর রচিত গ্রন্থের নাম ‘শ্রী শ্রী চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য। বর্ধমান জেলার রত্না নদীর কুলে দামুন্যা গ্রামে কবির জন্ম। কবির পিতা-মাতার নাম হৃদয় মিশ্র ও দেবকী। সেলিমাবাদ শহরের অধিবাসী গোপীনাথ নন্দী ছিলেন দামুন্যার তালুকদার। তাঁর প্রজা ছিলেন মুকুন্দরাম। ডিহিদার মাহমুদ শরীফের অত্যাচারে কবি দেশত্যাগ করে মেদেনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার গোচড়িয়া গ্রামে উপনীত হন। সেখানে পুকুরপাড়ের আশ্রয়ে স্বপ্নে দেবী তাঁকে আদেশ দেন মঙ্গলকাব্য রচনার। অতপর শিলাবতী নদী পার হয়ে তিনি ব্রাহ্মণভূমির রাজা বাঁকুড়া রায়ের নিবাস অড়রা গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি জমিদারপুত্র রঘুনাথের গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। রঘুনাথ জমিদার হলে স্বপ্নের কথা স্মরণ করে চণ্ডীর মাহাত্ম্যকাব্য রচনা করেন তিনি। তাঁর কাব্যের নাম ‘শ্রী শ্রী চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য । যদিও ভনিতায় অভয়ামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল ব্যবহার করা হয়েছে। কাব্য রচনার” স্বীকৃতস্বরূপ রঘুনাথ কবিকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি প্রদান করেন।
প্রচলিত কাহিনী অবলম্বনে মুকুন্দরাম এ কাব্য রচনা করেন। চণ্ডীমঙ্গলের আদি কবি মানিকদত্তের কাব্য থেকে কিছু সাহায্য গ্রহণ করলেও কাব্য রূপায়নে তাঁর কৃতিত্ব অপরিসীম। তাঁর কাব্যের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। প্রথমে বন্দনা ও সৃষ্টিকাহিনী বর্ণিত হয়েছে, এরপর দেবখণ্ড সতী ও পার্বতীর কাহিনী। দ্বিতীয় খণ্ডের নাম আক্ষেটিক খণ্ড কালকেতুর কাহিনী এবং তৃতীয় খণ্ডের নাম বণিকখন্ড ধনপতি সওদাগরের কাহিনী।
চণ্ডীমঙ্গলে কেবল দুটি কাহিনী পাওয়া যায়, অন্যান্য মঙ্গল কাব্যে একটিমাত্র কাহিনী রয়েছে। চণ্ডীমঙ্গলে ব্যাধের উপর চণ্ডীর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে নিচু পর্যায়ে এবং বণিকের উপর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যে পূজা প্রচারের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
কাব্যে কালকেতু স্বর্গভ্রষ্ট দেবতা ব্যাধসন্তান হিসেবে জীবন শুরু করে রাজার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু তার চরিত্রে দেবত্ব নেই, রাজাসনে বসেও সে ব্যাধ মানসিকতা ত্যাগ করতে পারেনি। এ কাহিনীর অধিকাংশ চরিত্রই জীবন্ত । কালকেতুর ভোজন, দেবীর সাথে ফুল্লরার বিবাদ, খুল্লনার সাথে লহনার কোন্দল, ধনপতি সওদাগরের পায়রা ওড়ানো, মুরারী শীলের কাছে কালকেতুর অঙ্গুরী বিক্রয়, ভাড়ু দত্তের বাজার করার ও অপমানিত হওয়ার দৃশ্যগুলো একেবারেই জীবন্ত। ভাড়ু দত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঠগ চরিত্র।
চন্ডীমঙ্গল কাব্যের দ্বিজ মাধবকে ‘স্বভাব কবি’ বলা হয়। তিনি নদীয় জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । কর্মউপলক্ষে চট্টগ্রামে বাস করার সময় তিনি কাব্য রচনা করেন। ১৫৭৯ সালে তাঁর কাব্য রচিত হয়।দ্বিজমাধব রচিত কাব্যের নাম সারদামঙ্গল বা সারদাচরিত । চণ্ডীমঙ্গলের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কবিগণ হলেন দ্বিজ রামদেব, মুক্তারাম সেন, হরিরাম, লালা জয়নারায়ণ সেন, ভবানী শংকর দাস, অকিঞ্চন চক্রবর্তী প্রমুখ ।
আরো জানতে পড়ুন:চন্ডীমঙ্গলের সংক্ষিপ্ত কাহিনী
দেবী অন্নদার গুণকীর্তন রয়েছে অন্নদামঙ্গল কাব্যে। অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রধান কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর। তিনি মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি । ভারতচন্দ্রের মাধ্যমেই মধ্যযুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। ভারতের হাওড়া জেলার পেঁড়ো গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নবদ্বীপের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি ছিলেন। মহারাজকে কবিতা রচনা করে শোনানোই তাঁর প্রধান কাজ। অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করার জন্য মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে ‘রায় গুণাকর’ উপাধি প্রদান করেন । তাকে নাগরিক কবি বলে অভিহিত করা হয়।
অন্নদামঙ্গল কাব্য তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ড ‘শিবনারায়ণ অন্নদামঙ্গল’, দ্বিতীয় খণ্ড ‘বিদ্যাসুন্দর কালিকামঙ্গল’ এবং তৃতীয় খণ্ড ‘ভবানন্দ-মানসিংহ অন্নদামঙ্গল’ নামে পরিচিত। ১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্রের মৃত্যু হয়।
অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রথম খণ্ডের উপাখ্যানে সতীর দেহত্যাগ ও উমারূপে জন্মগ্রহণ, শিবের সঙ্গে বিয়ে ও ঘরকন্যা, অন্নপূর্ণা মূর্তিধারণ, কাশী প্রতিষ্ঠা, ভবানন্দের জন্মকাহিনী, হরিহোড়ের দ্বিতীয় পক্ষে তরুণী ভার্যা গ্রহণে বিচলিত দেবীর হরিহোড়ের গৃহত্যাগ এবং ভবানন্দের প্রতি অনুগ্রহ করার উদ্দেশ্যে ভবানন্দ-গৃহে যাত্রা – প্রভৃতি বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডের প্রধান বিষয় বিদ্যাসুন্দরের প্রণয়কাহিনী। এটি কালিকামঙ্গলের প্রচলিত কাহিনী – বিদ্যা ও সুন্দরের গুপ্ত প্রণয়লীলা ও মিলনের বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। তৃতীয় খণ্ডের কাহিনী কবি ইতিহাস থেকে সংগ্রহ করলেও তা সত্যাশ্রয়ী নয় । এ খণ্ডে মানসিংহের যশোর গমন, দেবীর অনুগ্রহে ভবানন্দ মজুমদারের সাহায্যে রাজা প্রতাপাদিত্যের পরাজয়, বাদশাহের খেলাত লাভের উদ্দেশ্যে ভবানন্দের দিল্লী গমন এবং বাদশাহ কর্তৃক কারারুদ্ধ, কারাগারে ভবানন্দের দেবী উপাসনা, দেবী কর্তৃক দিল্লীতে উৎপাত, বাদশাহ কর্তৃক ভবানন্দের মুক্তি ও রাজা উপাধি প্রদান – এ কাহিনীই বর্ণিত হয়েছে।
অন্নদামঙ্গলের উল্লেখযোগ্য চরিত্র- মানসিংহ, ভবানন্দ, বিদ্যা, সুন্দর, মালিনী ইত্যাদি।
(এছাড়া ভারতচন্দ্র ‘সত্য নারায়ণ পাঁচালী’, ‘রসমঞ্জুরী’ (অনুবাদ), চণ্ডীনাটক প্রভৃতি রচনা করেন। রসমঞ্জুরী কাব্যটি ভারতচন্দ্র মৈথিলি ভাষা থেকে অনুবাদ করেন। কাব্যটির মূল রচয়িতা ভানু দত্ত। ভারতচন্দ্রের অসমাপ্ত নাটকের নাম ‘চণ্ডীনাটক’। ভারতচন্দ্রের সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুটি কবিতা হলো ‘নগাস্টক’ ও ‘গঙ্গাস্টক’।)
অন্নদামঙ্গলের বিখ্যাত পঙ্ক্তি;
১. আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
২. নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়?
৩. মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন ।
৪. বড়র পিরীতি বালির বাঁধ! ক্ষণে হাতি দড়ি, ক্ষণেকে চাঁদ
৫. মাতঙ্গ পড়িলে গড়ে পতঙ্গ প্রহার করে।
৬. হাভাতে যদ্যপি চায় সাগর শুকায়ে যায়।
৭. বাপে না জিজ্ঞাসে মায়ে না সম্ভাষে ।
৮. বাঘের বিক্রম সম মাঘের শিশির।
৯. হাভাতে যদ্যপি চায় সাগর শুকায়ে যায়।
অষ্টাদশ শতকে এসে মঙ্গলকাব্যের ধারা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এরই মধ্যে অসাধারণ কাব্য রচনা করেন ভারতচন্দ্র রায়। তিনখণ্ডের এ কাব্যের নাম অন্নদামঙ্গল। অন্নদার কথা থাকলেও এ কাব্য রচনার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের গৌরব বর্ণনা করা । কৃষ্ণচন্দ্ৰ এই কাব্য দিয়ে এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, এই কাব্য তাঁর দরবারে গাওয়া হয়েছিলো। তাছাড়া এ কাব্য রচনার পর কৃষ্ণচন্দ্র বর্তমান আকারে কালীপূজা প্রবর্তন করেন।
আরো জানতে পড়ুন:মধ্যযুগের সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্যকর্ম
ধর্ম ঠাকুর নামে এক পুরুষ দেবতার পূজা হিন্দু সমাজের নিচুস্তরের লোকদের মাঝে বিশেষত ডোম সমাজে প্রচলিত ছিল। ধর্ম ঠাকুর প্রধানত দাতা, নিঃসন্তান নারীকে সন্তান দান করেন, অনাবৃষ্টি হলে ফসল দেন, কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্ত করেন। ধর্ম ঠাকুর ক্রুদ্ধ হলে কুষ্ঠ হয়। তিনি নিরাকার হলেও সন্ন্যাসী ব্রাহ্মণ বা ফকিরের বেশ ধারণ করেন। ধর্ম ঠাকুর হলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রচ্ছন্ন রূপ কিংবা বৈদিক যুগের দেবতা। ধর্ম ঠাকুরের কোনো মূর্তি নেই, কূর্মাকৃতি একখণ্ড শিলাই ধর্ম ঠাকুর।
ধর্মঠাকুরকে কেন্দ্র করে যে কাব্যধারা রচিত হয় তাই ধর্মমঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত। ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারের জন্য ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার সূচনা হয়েছে। ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত –
১. লাউসেনের কাহিনি ২. রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি
এর মধ্যে লাউসেনের কাহিনিই কাব্যে প্রাধান্যপ্রাপ্ত । ধর্মমঙ্গলের প্রথম অংশ – রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাহিনি খুবই পুরাতন, কিন্তু দ্বিতীয় অংশ লাউসেনের কাহিনি অর্বাচীন। প্রথম কাহিনিটি পৌরাণিক ঐতিহ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, অপর কাহিনির সঙ্গে ইতিহাস ও লৌকিক আখ্যান জড়িত। তবে ইতিহাসের কালের সঙ্গে এর মিল নেই। লাউসেনের কাহিনি যথার্থ ধর্মমঙ্গল নামে পরিচিত।
ধর্মমঙ্গল ধারার প্রখ্যাত কবিগণ হলেন ময়ূরভট্ট, আদি রূপরাম, খেলারাম চক্রবর্তী, রূপরাম চক্রবর্তী, শ্যামপণ্ডিত, মানিকরাম গাঙ্গুলি, রাজারাম দাস, রামদাস আদক, ঘনরাম চক্রবর্তী প্রমুখ।
ধর্মমঙ্গল কাব্যধারার প্রথম কবি হলেন ময়ূরভট্ট। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘হাকন্দপুরাণ’। তাঁর কবিতার একটি চরণও আবিষ্কৃত হয়নি। আদি কবি হিসেবে অধিকাংশ কবি তাঁকে স্মরণ করায় তার সম্পর্কে জানা গিয়েছে। তিনি চোদ্দ শতকের কবি।
ধর্মপাঁচালির দ্বিতীয় কবি আদি রূপরাম । কবি মানিকরাম গাঙ্গুলিই কেবল পূর্বসূরীরূপে তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁর কোনো পুথি আবিষ্কৃত হয়নি। শ্যামপণ্ডিত ‘নিরঞ্জনমঙ্গল’ নামে একটি কাব্য রচনা করেন।
ঘনরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গল কাব্যধারায় অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি। ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে কবির কাব্য ‘শ্রী ধর্মমঙ্গল’ রচনা সমাপ্ত হয়। বর্ধমান জেলার কৃষ্ণনগরে তাঁর জন্ম। ‘শ্রী ধর্মমঙ্গল’-এর উপজীব্য বিষয় হলো লাউ সেনের কাহিনী।
অপূর্ব রূপ গুণান্বিত রাজকুমার সুন্দর এবং বীরসিংহের অতুলনীয়া সুন্দরী ও বিদূষী কন্যা বিদ্যার গুপ্ত প্রণয়কাহিনী কালিকামঙ্গল কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়। মূল কাহিনী কাশ্মীরের বিখ্যাত কবি বিলহন কর্তৃক তাঁর ‘চৌরপঞ্চাশিকা’ কাব্যে দ্বাদশ শতাব্দীতে সংস্কৃতে বিধৃত হয়েছিল। ক্রমে চৌরপঞ্চাশিকার কাহিনী বাংলায় এসে প্রণয়কাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে কালিকামঙ্গলে স্থান পেয়েছে।
কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দরের আদি কবি হলেন কবি কঙ্ক। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার রাজেশ্বরী নদীর তীরে বিপ্র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবি কঙ্ক সতের শতকে গুরুকন্যা লীলার প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর জীবনের করুণ ও বিচিত্র কাহিনী অবলম্বনে রচিত লোকগাঁথা ‘কঙ্ক ও লীলা’ নামে ময়মনসিংহ গীতিকায় স্থান পেয়েছে।
সাবিরিদ খান (শাহ বারিদ খান) ছিলেন ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্যের রচয়িতা। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের কবি ছিলেন। ড. আহমেদ শরীফের মতে, তিনি ১৪৮০-১৫৫০ সালের মধ্যকার কবি। তিনি ‘রসূল বিজয়’ কাব্যও রচনা করেন। হযরত মুহম্মদ (স) এর রাজ্য জয়, তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা হচ্ছে ‘রসূল বিজয়’ গ্রন্থের বক্তব্য।
রাম প্রসাদ সেন কালিকামঙ্গলের বিশিষ্ট কবি। তিনি শ্যামসঙ্গীত রচনায়ও অপরিসীম কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। রাম প্রসাদ সেন ১৭২০ সালে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার হালিশহরের নিকটবর্তী কুমারহট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কবি ভারতচন্দ্রের সমসাময়িক ছিলেন। তিনি জমিদারের মুহুরীর কাজ করতেন এবং ভাবতন্ময়ের কারণে হিসাবের খাতায় কালীকীর্তন লিখে রাখতেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থের নাম ‘কবিরঞ্জন’। নবদ্বীপের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁকে ‘কবিরঞ্জন’ উপাধি দান করেন।
কয়েকজন কবি গঙ্গামঙ্গল কাব্য রচনা করেন, এর মধ্যে দ্বিজ মাধব প্রাচীনতম। তিনি চণ্ডীমঙ্গলের কবি দ্বিজমাধব বলে অনুমিত। তিনি চৈতন্যভক্ত ছিলেন। গঙ্গামঙ্গলের কাহিনী স্বর্গ থেকে গঙ্গার নদীরূপে মর্তে অবতরণ ও সমুদ্রে গমন ।
পৌরাণিক দেবদেবীদের নিয়ে প্রথম কাব্য রচনা করেন কবিচন্দ্র মিশ্র। কাব্যের নাম ‘গৌরীমঙ্গল’। কাব্যটির রচনাকাল ১৪৯৭ সাল। কবির মায়ের নাম লীলাবতী । পিতার নাম পাওয়া যায়নি, তবে তিনি জ্ঞানী ও শাস্ত্রবেত্তা ছিলেন । তাঁর বাড়িতে টোল ছিল । তিনি ত্রিবেণী সপ্তগ্রামের অন্তর্গত বালাণ্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পরমেশ্বর দাস, যিনি কবীন্দ্র পরমেশ্বর বলে অনুমিত।
শ্রী চৈতন্যদেব এবং তাঁর কতিপয় ভাব শিষ্যের জীবন কাহিনী নিয়ে জীবনী সাহিত্যের সৃষ্টি। শ্রীচৈতন্যদেব কখনও কবিতা লেখেননি, কেবল কবিতা নয় তিনি কোনো সাহিত্য সৃষ্টি করেননি, তবুও তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অধিকার করে আছেন বড় একটা স্থান। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে তাঁর প্রভাব অপরিসীম। মধ্যযুগে চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) জীবনী অবলম্বনে রচিত কাব্যগুলো বাংলাভাষায় জীবনী সাহিত্য রচনার প্রথম প্রয়াস। চৈতন্যদেব প্রবর্তিত ধর্ম হলো মানবপ্রেম ধর্ম। তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো : “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’
চৈতন্যদেব ষোল শতকে রাধাকৃষ্ণ পালায় রুক্মিনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। চৈতন্যদেবের জীবনচরিত পদ হিসেবে প্রথম সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়। চৈতন্যদেবের জীবনীগ্রন্থকে ‘কড়চা’ বলে। কড়চা শব্দের অর্থ ডায়রি বা দিনলিপি। চৈতন্যের প্রথম জীবনীগ্রন্থ ‘মুরারি গুপ্তের কড়চা’ । এ কাব্যের প্রকৃত নাম ‘শ্রীশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য চরিতামৃত’। এটি চৈতন্যজীবনীর অবিতর্কিত লেখা এবং মুরারিগুপ্ত চৈতন্য জীবনী রচনার অবিতর্কিত আদর্শের প্রবর্তনকারী। বাংলাভাষায় শ্রীচৈতন্যের প্রথম জীবনীকাব্য বৃন্দাবন দাসের ‘শ্রীচৈতন্যভাগবত’। এছাড়া লোচনদাসের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’, গোবিন্দ দাসের ‘কড়চা’, চূড়ামণি দাসের ‘গৌরাঙ্গবিজয়’ উল্লেখযোগ্য ।
বাংলা ভাষায় রচিত সবচেয়ে তথ্যবহুল জীবনী গ্রন্থ শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত’। এটি কৃষ্ণদাস কবিরাজ কর্তৃক রচিত। চৈতন্যদেবের জীবনী ছাড়া বৈষ্ণব ধর্মের আর যারা প্রধান ব্যক্তি ছিলেন, তাদের জীবনী নিয়েও বেশ কিছু বই লিখিত হয়েছে। অদ্বৈত আচার্য ছিলেন এ ধরনের একজন ব্যক্তি। কবি কৃষ্ণদাস সংস্কৃত ভাষায় তাঁর বাল্যকালের কথা লিখেন যা পরবর্তীতে শ্যামানন্দ বাংলায় অনুবাদ করেন ‘অদ্বৈততত্ত্ব’ নামে। অদ্বৈতজীবনী নিয়ে ঈশান নাগরের ‘অদ্বৈতপ্রকাশ’ হরিচরণ দাসের ‘অদ্বৈতমঙ্গল’ উল্লেখযোগ্য রচনা। এছাড়া অদ্বৈত আচার্যের স্ত্রী সীতাদেবীকে নিয়ে লেখা হয়েছে ‘সীতাচরিত’, ‘সীতাগুণকদম্ব’ ।
শ্রী চৈতন্যদেব ১৪৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৮ই ফেব্রুয়ারি শনিবার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫৩৩ খ্রিষ্টাব্দে পুরীতে মারা যান। চৈতন্যের বাল্য নাম ছিল নিমাই, দেহবর্ণের জন্য নাম হয় গোরা বা গৌরাঙ্গ, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল বিশ্বম্ভর, সন্নাস গ্রহণের পর শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য- সংক্ষেপে ‘চৈতন্য’ নামে পরিচিত হন। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাব অপরিসীম। এদেশে বৈষ্ণব ধর্মের ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে তিনি বিপর্যন্ত হিন্দু সমাজে যে নবচেতনার সঞ্চার করেছিলেন তার ব্যাপক প্রভাব ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে তৎকালীন সমাজে ও সাহিত্যে সম্প্রসারিত হয়ে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। শ্রী চৈতন্য তাঁর জীবিতকালেই ভগবানের অবতার বলে গৃহীত হয়েছিলেন।
শ্রী চৈতন্যদেব হলেন ধর্মপ্রচারক। তাঁর নামে বাংলা সাহিত্যের একটি যুগের নামকরণ হয়েছে। চৈতন্যদেব প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্ম বাংলা কবিতায় বৈষ্ণব দর্শনের প্রবেশ ঘটায়। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্য দেবদেবীস্তুতিমূলক ধারা থেকে বেরিয়ে মানবধর্ম প্রশস্তিতে মেতে ওঠে। শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকাহিনী অবলম্বনে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে জীবনী সাহিত্যের সূচনা হয়।
বিশ্বের অপরাপর সাহিত্যের মত বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য অনুবাদ হয়েছে বাংলা ভাষায়। বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট অঙ্গন জুড়ে অনুবাদ সাহিত্যের চর্চা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে কবিরা অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে প্রধানত অনুবাদ হয়েছে—
১. সংস্কৃত থেকে (মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবত)
২. হিন্দি সাহিত্য থেকে
৩. আরবি-ফারসি সাহিত্য থেকে।
মধ্যযুগের কোনো অনুবাদই হুবহু অনুবাদ নয়। কবিরা মূল কাহিনী ঠিক রেখে মাঝে মাঝে নিজেদের মনের কথা বসিয়ে দিয়েছেন। অনুবাদ সাহিত্যে হিন্দু লেখকদের অনুবাদকৃত সাহিত্যের কথা বলা হয়। মুসলমান সাহিত্যিকদের অনুবাদকৃত সাহিত্যকে রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান বলা হয়ে থাকে।
খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে সংস্কৃত ভাষায় রামায়ণ রচিত হয়। রামচরিত- অবলম্বনে বাল্মীকি সংস্কৃত ভাষায় প্রথম রামায়ণ রচনা করেন। সপ্তকাণ্ডে বিভক্ত এবং চব্বিশ হাজার অনুষ্টুপ শ্লোকে রচিত হয়েছে সুবৃহৎ বাল্মীকি- রামায়ণ। অনেকের অনুমান, সপ্তকাণ্ডের প্রথম কান্ড (বালকাণ্ড) এবং শেষকান্ড (উত্তরকাণ্ড) বাল্মীকির রচনা নয়। কারণ বাকি পাঁচটি কাণ্ডে (অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড ও লঙ্কাকাণ্ড) কাহিনী সুসংহত এবং মহাকাব্যোচিত।
বাল্মীকির মূল নাম দস্যু রত্নাকর। ‘বল্মীক’ মানে হলো উইপোকা। দস্যু রত্নাকর উইপোকার ঢিবির উপর বসে রাম নামের তপস্যা করেন বলে তার নাম হয় বাল্মীকি। রামায়ণের প্রথম অনুবাদক পনের শতকের কবি কৃত্তিবাস ওঝা। তিনি হলেন প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ অনুবাদক।
কৃত্তিবাসের রামায়ণের অন্য নাম ‘শ্রীরাম পাঞ্চালী’। এটি প্রথম মুদ্রিত হয় ১৮০২-১৮০৩ সালে শ্রীরামপুরের মিশনারী ছাপাখানায় উইলিয়াম কেরীর উদ্যোগে। কৃত্তিবাসের রামায়ণ-রচনার বহু আগে থেকেই ভারতের পূর্বাঞ্চলে রামায়ণের কাহিনী প্রচারিত হয়ে এসেছে। কৃত্তিবাস পঞ্চদশ শতাব্দীতে রামায়ণের অনুবাদ করলেও ষোড়শ শতাব্দীতে রামায়ণ-অনুবাদে কেউ ব্রতী হননি। সতেরো আঠারো শতকে বেশ কয়েকজন কবি রামায়ণের অনুবাদ রচনা করেন। নিত্যানন্দ আচার্য ও চন্দ্রাবতীকে অনেকে ষোড়শ/সপ্তদশ শতকের কবি বললেও প্রকৃতপক্ষে তাঁরা আঠারো শতকের কবি । সতেরো শতকের (মতান্তরে অষ্টাদশ শতকের) কবি চন্দ্রাবতী রামায়ণ অনুবাদ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি। চন্দ্রাবতী হলেন মনসামঙ্গলের কবি দ্বিজ বংশীদাসের বিদুষী কন্যা ।
পঞ্চদশ শতাব্দীর অসমিয়া সাহিত্যের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কবি মাধব কন্দলী। মাধব কন্দলী রামায়ণের মধ্যভাগের পাঁচটি কাণ্ড অসমিয়া ভাষায় অনুবাদ করেন। কৃত্তিবাসের ন্যায় মাধব কন্দলীও রাজাজ্ঞায় ‘শ্রীরাম- পাঞ্চালী’ রচনা করেন। তিনি বরাহ-রাজা মহামাণিক্যের সভাসদ ছিলেন। কিন্তু এ বরাহ রাজা মহামাণিক্য কে ছিলেন তা নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি। আসামে নব্য বৈষ্ণব আন্দোলনের উদ্গাতা শঙ্করদেব রামায়ণের উত্তরকান্ড রচনা করে মাধব কন্দলীর রামায়ণে পরিপূর্ণতা এনে দেন ।
আজ হতে অন্তত আড়াই হাজার বছর পূর্বে সংস্কৃত ভাষায় মহাভারত রচিত হয়। ইউরোপীয় পণ্ডিতদের মতে এ-কাব্য খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ এবং খ্রিষ্টীয় ২০০ অব্দের মধ্যে রচিত। মহাভারতের কাহিনী রামায়ণের পরবর্তী যুগের হলেও মহাভারত রামায়ণের পরে প্রকাশিত হয়। এটি ১৮ খণ্ডে রচিত এবং এর শ্লোক সংখ্যা ৮৫০০০।
মহাভারতের মূল রচয়িতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। বেদ এর ব্যাখ্যা করেছিলেন বলে তাঁর অপর নাম বেদব্যাস। রামায়ণের ন্যায় মহাভারতেরও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলভেদে পৃথক পৃথক আঞ্চলিক রূপ প্রচলিত ছিল । উত্তরাঞ্চলে প্রচলিত মহাভারতের পর্বসংখ্যা আঠার এবং দাক্ষিণাত্যের মহাভারত চব্বিশ পর্বে সমাপ্ত ।
মহাভারত পাঠ্যকাব্য বলেই বিভিন্ন সময়ে এর খণ্ড-পর্ব বাংলা ভাষায় রচিত হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ মহাভারতের সংখ্যা তাই কম। একমাত্র কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও কাশীরাম দাস ছাড়া আর কোনো বাঙালি কবি সম্পূর্ণ মহাভারত রচনায় প্রয়াসী হননি ।
ষোড়শ শতকে সুদূর চট্টগ্রামে পরাগল খানের নির্দেশে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারত রচনা করেন এবং তা পরাগল খানের সভায় পঠিত হয়। তাঁর মহাভারত পরাগলি মহাভারত নামে পরিচিত। কবীন্দ্র পরমেশ্বর অশ্বমেধপর্ব রচনা করেননি, তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করেন শ্রীকর নন্দী। বেদব্যাস-শিষ্য জৈমিনি-রচিত অশ্বমেধপর্ব এদেশে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। শ্রীকর নন্দী, রামচন্দ্র খান, দ্বিজ রঘুনাথ ছাড়া আরো অনেক কবি জৈমিনি-ভারত অনুবাদ করেন।
কবীন্দ্র পরমেশ্বর আদি অনুবাদক হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কবীন্দ্র পরমেশ্বরের বিস্তারিত পরিচয় জানা না গেলেও কবির আবির্ভাব-কাল সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাঁর কাব্যেই পাওয়া যায়। কাব্যের উপক্রমণিকা থেকে জানা যায় যে, গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ্ তাঁর সেনাপতি পরাগল খানকে লস্কর বা সেনানী শাসক নিযুক্ত করে চট্টগ্রামে প্রেরণ করেন। পরাগল খান চট্টগ্রামে অনেকদিন বসবাস করেন। হোসেন শাহের (১৪৯৩-১৫১৯) রাজত্বকালে পরাগল খানের অনুরোধক্রমে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারত অনুবাদ করেন।
কবীন্দ্র পরমেশ্বরের পরাগলি মহাভারত ১৮টি পর্বে এবং ১৭,০০০ শ্লোকে সমাপ্ত। ব্যাস রচিত মূল মহাভারতকে অনুসরণ করলেও পরমেশ্বরের রচনা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। কবীন্দ্র পরমেশ্বরের কাব্যটি বর্ণনাধর্মী এবং তাঁর ভাষা স্বচ্ছ, প্রাঞ্জল এবং প্রবহমান।
কবীন্দ্র পরমেশ্বর-অনূদিত মহাভারত যেমন পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারে পরাগলি মহাভারত নামে পরিচিত, অনুরূপ শ্রীকর নন্দী-অনূদিত কাব্যও পৃষ্ঠপোষকের নামানুসারে ‘ছুটিখানী মহাভারত’ নামে চিহ্নিত হয়ে থাকে। ছুটি খানের প্রকৃত নাম নসরত খান, ইনি পরাগল খানের পুত্র।
সতের শতকের কবি কাশীরাম দাস হলেন মহাভারতের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অনুবাদক । অবশ্য তিনি মহাভারত অনুবাদ সম্পন্ন করেননি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভাইয়ের ছেলে এবং আরো কয়েকজন মিলে মহাভারত অনুবাদ সম্পন্ন করেন। কাশীরাম দাসের ‘মহাভারত’ এর দুটি বিখ্যাত পক্তি –
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস ভনে শোনে পুণ্যবান।।
ভাগবত ১২ খণ্ডে রচিত এবং এর শ্লোকসংখ্যা ৬২০০০। হিন্দুধর্মের এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন মালাধর বসু। এজন্য তিনি বাদশাহ রুকনউদ্দিন বরবক শাহের কাছ থেকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি লাভ করেন। তাঁর ভাগবতের নাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’।
সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভাগবত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিকট পরম পবিত্র গ্রন্থ। এটি পুরাণ নামক সংস্কৃত সাহিত্যের অন্তর্গত। পুরাণের পাঁচটি লক্ষণ – সর্গ, প্রতিসর্গ, বংশ, মন্বন্তর ও বংশানুচরিত অর্থাৎ সৃষ্টিতত্ত্ব, প্রলয়ের পরবর্তী সৃষ্টিকাহিনী, দেবগণের জন্মবৃত্তান্ত, মনুর অধিকারকাল হিসাবে যুগবিভাগ, রাজাদের বংশকাহিনী ও কার্যকলাপ – কমবেশি ভাগবতে স্থান পেয়েছে। কৃষ্ণের জন্ম, বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের ঐশ্বরিক কার্যকলাপ এবং দেহত্যাগের কথা এই গ্রন্থে বর্ণিত । ভগবান বিষ্ণু কৃষ্ণরূপে জন্মগ্রহণ করে যে অদ্ভুত কাজগুলো অনায়াসে সম্পন্ন করেছেন সেগুলো কাব্যরূপে ও পাণ্ডিত্যে সমৃদ্ধ হয়ে ভাগবতে পরিবেশিত হয়েছে।
বেদের মন্ত্রসমূহ বিন্যাস করে যিনি বেদব্যাস আখ্যা পেয়েছেন তিনি অতি প্রাচীন ঋষি এবং হিন্দুসমাজের সর্বাপেক্ষা মাননীয় পণ্ডিত। তাই মহাভারত এবং পুরাণসমূহ ও ভাগবতের রচয়িতারূপে ব্যাসকে নির্দিষ্ট করে গ্রন্থগুলোর পবিত্রতা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এত বিপুল বৃহৎ কলেবরে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা একজনের পক্ষে রচনা অসম্ভব বলেই যুক্তিসংগত। এজন্য সংস্কৃত ভাগবতের বা ধর্মীয় গ্রন্থ প্রণেতাদের যথার্থ নাম ও কাল চিরদিনের জন্য অজ্ঞাত থেকে গিয়েছে।
মালাধর বসুর পিতার নাম ভগীরথ এবং মাতার নাম ইন্দুমতী। তাঁর জন্ম কায়স্থ বংশে এবং বসতি ছিল বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার মেমারী রেলস্টেশনের অনতিদূরে কুলীন গ্রামে। তাঁর একজন পুত্রের উপাধি ছিল ‘সত্যরাজ খান’।
কোরআন শরীফের প্রথম অনুবাদক হলেন ভাই গিরিশচন্দ্র সেন । তিনি ১৮৮৬ সালে কোরআন শরীফ অনুবাদ করেন। কোরআন শরীফ অনুবাদ ছাড়াও তিনি ‘তাপসমালা’ রচনা করেন ‘তাজকেরাতুল আউলিয়া’ অবলম্বনে । গিরিশচন্দ্র সেনের উপাধি হলো ‘ভাই’। তাঁর বাড়ি ছিল নরসিংদী জেলায়। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী।
মহাকাব্য | রচয়িতা |
---|---|
রামায়ণ | বাল্মীকি |
মহাভারত | কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস |
ইলিয়ড | হোমার |
ওডিসি | হোমার |
মুসলমান কবিগণ মধ্যযুগে রোমান্টিক প্রণয়কাব্য রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে প্রত্যক্ষ অবদান রাখতে সক্ষম হন। হিন্দি এবং আরবি- ফারসি সাহিত্যের উৎস হতে উপকরণ নিয়ে রচিত প্রণয়কাব্য গুলোতে মানবীয় বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। প্রণয়োপাখ্যানগুলোর মধ্যে ইউসুফ- জোলেখা, লাইলী-মজনু, হানিফা ও কয়রাপরী, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, জেবলমুলক-শামারোখ প্রভৃতি কাব্যের কাহিনী ফারসি সাহিত্য থেকে এবং গুলে বকাওলী, সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী, পদ্মাবতী, মধুমালতী, গদামল্লিকা প্রভৃতি কাব্যের কাহিনী হিন্দি সাহিত্য থেকে গৃহীত।
পনের শতকের কবি শাহ মুহম্মদ সগীর রচনা করেন ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য। তিনি মধ্যযুগের প্রথম মুসলিম কবি ও ইউসুফ জোলেখা কাব্যের প্রথম কবি। বাইবেল ও কুরআন শরীফে নৈতিক উপাখ্যান হিসেবে এ প্রণয়কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ইরানি কবি ফেরদৌসীর ইউসুফ জোলেখা কাব্যের রোমান্টিক ভাবধারার সাথে শাহ মুহম্মদ সগীরের কাব্যের যথেষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে। কুরআন ও ফেরদৌসীর কাব্য ব্যতীত মুসলিম কিংবদন্তী ও স্বীয় প্রতিভার উপর নির্ভর করে শাহ মুহম্মদ সগীর তাঁর ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য রচনা করেন। এ কাব্যের কাহিনী মিশরের। অনেকের মতে তিনি ফারসি কবি জামী রচিত ফারসি প্রেমাখ্যান ‘ইউসুফ ওয়া জুলয়খা’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘ইউসুফ জোলেখা’ কাব্য। তবে কবি জামী শাহ মুহম্মদ সগীরের পরবর্তী কবি হওয়ায় জামীর কাব্য অনুসরণ করার সম্ভাবনা খুবই কম।
কাব্যটি গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের রাজত্বকালে রচিত হয়। এ কাব্যের মূল বিষয়বস্তু হলো- তৈমুর বাদশাহ-কন্যা জুলেখা এবং ক্রীতদাস ইউসুফের প্রণয় কাহিনী। ইউসুফ জোলেখা কাব্যের অধ্যায় বা সর্গশীর্ষে সর্বত্র ছন্দের ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাগতালের উল্লেখ আছে। কাব্যে ঊনসত্তরটি শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে। কাব্যের মধ্যে মধ্যে গান রয়েছে। ‘ধুয়া’সহ এরূপ ছয়টি গানের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তবে ইউসুফ জোলেখা কাহিনী কাব্য, গীতি কাব্য নয়।
ষোল শতকের কবি দৌলত উজির বাহরাম খান ফারসি কবি জামী রচিত ফারসি প্রেমাখ্যান ‘লায়লা ওয়া মজনুন’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘লায়লী মজনু’ কাব্য। এ কাহিনীর মূল উৎস আরবী লোকগাঁথা। এর উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো হলো – লাইলী, কয়েস, নওফলরাজ, হেতুবতী। সুফিতত্ত্বের রূপকে লায়লী মজনু কাব্য প্রথম রচনা করেন ইরানের কবি নিজামী গঞ্জাভি ১১৮৮ খ্রিষ্টাব্দে। ইরানের অপর কবি আবদুর রহমান জামী একই আদর্শে লায়লী মজনু প্রেমকাব্য রচনা করেন ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। ভারতের ফারসি কবি আমির খসরু ১২৯৮ সালে উক্ত কাব্য রচনা করেন। ধারণা করা হয়, বাহরাম খান জামীর কাব্যের অনুসরণ করেছিলেন। এটি বিরহের কাব্য ।
বাহরাম খান মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি। তিনি চট্টগ্রামের ‘নগর ফতেয়াবাদ’র অধিবাসী ছিলেন। তাঁর পিতা মোবারক খান চট্টগ্রামের অধিপতি নিজাম শাহ সূর-এর কাছ থেকে দৌলত উজির (অর্থমন্ত্রী) উপাধি পেয়েছেন। অল্পবয়সে বাহরাম খান পিতৃহীন হলে বাহরাম খান পিতৃপদ না পেলেও ১৫৬০ সালে ঐ উপাধি লাভ করেন। কবির পূর্বপুরুষ হামিদ খান গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহের প্রধান উজির ছিলেন। তিনি সুলতানের কাছ থেকে ‘দুই সিক’ ভূমির জায়গীর লাভ করেন। বাহরাম খান পীরভক্ত ছিলেন; আসাউদ্দিন ছিলেন তাঁর পীর। তিনি ভণিতায় বহুবার পীরের চরণশরণ কামনা করেছেন। পীর কবির প্রেরণাদাতা, কিন্তু কাব্যের পাঠক রাজপুরুষ। কবির ‘লায়লী মজনু’ কাব্যে পীর ও সুলতানের প্রতি আনুগত্যের প্রতিফলন রয়েছে। বাহরাম খানের অপর কাব্য হলো ইমাম বিজয়। এটি কারবালার বিষাদময় কাহিনী অবলম্বনে রচিত।
ষোল শতকের কবি মুহম্মদ কবীর হিন্দি কবি মনঝন রচিত হিন্দি প্রেমাখ্যান ‘মধুমালত’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘মধুমালতী’ কাব্য। ড. এনামুল হকের মতে, এটি ১৫৮৮ সালে রচিত। মনঝন ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘মধুমালত’ রচনা করেন। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় কবি। মনঝন সুফিসাধক ছিলেন। শেখ মুহম্মদ গওস তাঁর পীর ছিলেন। মুহম্মদ কবীর ‘লোকমন হরষিত’ করার উদ্দেশ্যে এটি ভাষান্তর করেন। বাংলা অনুবাদে সুফিতত্ত্বের ব্যঞ্জনা ফোটে নি। তবে বাংলা কাব্যে মানবিক গুণ আছে।
শাহ বারিদ খান চট্টগ্রামের একজন কবি। তিনি ‘বিদ্যাসুন্দর’, ‘হানিফা কয়রাপরী’ ও ‘রসূল বিজয়’ কাব্য রচনা করেন। তিনখানি কাব্যই খণ্ডিত আকারে আবিষ্কৃত হওয়ায় কবির জন্মস্থান, জন্মকাল ও পৃষ্ঠপোষক অজ্ঞাত রয়ে গেছে। শাহ বারিদ খানের ‘শাহ’ উপাধি থেকে মনে হয় তিনি সুফী তরিকার সাধক ছিলেন। ‘আশিক ও মাসুক’র তত্ত্ব আরোপ করে তিনি ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য রচনা করলেও আখ্যানভাবে সেরূপ তত্ত্বের ব্যঞ্জনা পাওয়া যায় না।
বিদ্যাসুন্দর-প্রেমকাহিনীর আদি উৎস কাশ্মীরের কবি বিহনের রচিত সংস্কৃত চৌরপঞ্চাশিকা তথা পঞ্চাশটি শ্লোকে বিধৃত আদিরসের প্রেমকবিতা বিহন এগার শতকে আবির্ভূত হন। মূল সংস্কৃত ‘চৌরপঞ্চাশিকা’ মানব প্রেমাশ্রিত রচনা। শ্রীধর ও শাহ বারিদ খানের ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য রূপক নয়, রূপজ প্রেমকাব্য। হানিফা ও কয়রাপরী আধা-জঙ্গনামা ও আধা-রোমান্সধর্মী উপাখ্যান।
কবি আবদুল হাকিমের প্রণয়োপাখ্যানগুলো হলো – ‘ইউসুফ জোলেখা’ – এবং ‘লালমতি- চ-সয়ফুলমুলুক’। কবি আবদুল হাকিম নিজেকে বাঙালি বলতে গর্ববোধ করতেন । মধ্যযুগে একদল মুসলমান বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করতো। কবি এদের নিন্দা করে রচনা করেছিলেন বিখ্যাত পঙ্ক্তি –
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী ।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥
তাঁর আরেকটি বিখ্যাত পঙ্ক্তি হলো – ‘দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায় নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।’ কবি আবদুল হাকিমের তত্ত্বমূলক গ্রন্থ হলো – নূরনামা, নসিয়তনামা, সবারমূখতা, চারি মোকামভেদ, দোরবে মজলিশ ইত্যাদি।
ষোড়শ শতকের যুদ্ধকাব্য রচয়িতাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা খ্যাতিমান কবি সৈয়দ সুলতান । তিনি কেবল কবিই ছিলেন না, ছিলেন সুফি-সাধক ও শাস্ত্রবিদ তাঁর সমসাময়িক কালের কবিদের রচনা থেকে জানা যায় যে, তিনি পীর ছিলেন। তাঁর জীবনকাল আনুমানিক ১৫৫০-১৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দ। কবির জন্মভূমি চট্টগ্রাম জেলার চক্রশালা গ্রাম। তিনি অনেকগুলো কাব্য রচনা করেন। তাঁর কাব্যগুলো হলো ‘নবী-বংশ’, ‘শবে মিরাজ’ ‘ওফাতে রসূল’, ‘নবীবংশ’, ‘জয়কুম রাজার লড়াই’, ‘ইবলিশ নামা’, ‘জ্ঞান চৌতিশা’, ‘জ্ঞান প্রদীপ’ । এছাড়া তিনি লিখেছেন মারফতি গান এবং পদাবলি। ‘নবীবংশ’ গ্রন্থের শেষাংশ হলো ‘শবে মিরাজ’।
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘নবী বংশ’। এতে তিনি কেবল ইসলাম ধর্মীয় নবীদের কাহিনী লিখেননি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও হরির কথাও লিখেছেন। তিনি চার বেদকে ঈশ্বরপ্রেরিত শাস্ত্রগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করেছিলেন । এ কাব্যের উৎস হিসাবে আরবি-ফারসি সাহিত্যের নামোল্লেখ করা যায় । শবে-বরাত ও ইবলিশনামা নবী-বংশ কাব্যের অংশবিশেষ । তাঁর ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে শুভ আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুলের সঙ্গে অশুভ ইবলিশ ও তার সহচরদের দ্বন্দ্ব এবং এই দ্বন্দ্বের ফলে শুভর জয়লাভের বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
গুলে বকাওলীর প্রথম রচয়িতা ইজ্জতুল্লাহ নামক জনৈক বাঙালি লেখক। তিনি ১৭২২ সালে ফারসি ভাষায় গ্রন্থটি রচনা করেন। এ গ্রন্থটি হিন্দি থেকে ভাষান্তরিত। গদ্যে রচিত এ গ্রন্থের কাহিনি কাব্যে রূপ দিয়ে গুলে বকাওলী বাংলা ভাষায় রচনা করেন নওয়াজীশ খান । চট্টগ্রামের বাণী গ্রামের জমিদার বংশের আদি পুরুষ বৈদ্যনাথ রায়ের অনুপ্রেরণায় নওয়াজীশ খান রচনা করেন গুলে বকাওলী। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গ্রন্থটি অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রচিত ।
মায়ানমারের উত্তর-পশ্চিম সীমায় এবং চট্টগ্রামের দক্ষিণে সমুদ্রের তীরে আরাকানের অবস্থান। আরাকানকে বাংলা সাহিত্যে রোসাঙ্গ নামে অভিহিত করা হয়। রোসাঙ্গ রাজসভাকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য চর্চা হয় । আরাকান রাজসভার কবিগণের মধ্যে দৌলত কাজী, মরদন, কোরেশী মাগন ঠাকুর, আলাওল, আবদুল করিম খোন্দকার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। মধ্যযুগে ধর্মসংস্কারমুক্ত ঐহিক কাব্যকথার প্রবর্তন করেন মুসলমান কবিগণ এবং তা আরাকান রাজসভাকে কেন্দ্র করে রূপায়িত হয়ে ওঠে। একান্ত মানবিক প্রেমাবেদন-ঘনিষ্ঠ এসব কাব্য অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এ সময়ের কবিগণের পুরোধা দৌলত কাজী বাংলা রোমান্টিক কাব্যধারার পথিকৃৎ হিসেবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
সতের শতকের কবি দৌলত কাজী হিন্দি কবি সাধন রচিত প্রেমাখ্যান ‘মৈনাসত’ অবলম্বনে রচনা করেন সতীময়না-লোর চন্দ্রানী কাব্য । তাঁর সতীময়না গল্পের মূলে ছিলো পশ্চিমা ভোজপুরী ভাষায় প্রচলিত একটি কাহিনী। দৌলত কাজী কাব্যটি সমাপ্ত করতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর বিশ বছর পর আলাওল কাব্যটির দ্বিতীয় খণ্ডের জ্যৈষ্ঠ মাসের বর্ণনা এবং সম্পূর্ণ তৃতীয় খণ্ড রচনা করেন ।
সতের শতকের কবি ছিলেন কোরেশী মাগন ঠাকুর। তিনি ছিলেন । রোসাঙ্গ (আরাকান) রাজসভার প্রধান উজির। মূলত তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় রোসাঙ্গে বাংলা সাহিত্য চর্চা হয়েছিল। তাঁর রচিত কাব্যের নাম ‘চন্দ্রাবতী’। ভদ্রাবতী নগরের রাজপুত্র বীরভানের চিত্রার্পিত রূপ দেখে রাজকন্যা চন্দ্রাবতীর বীরভান ধ্যান, ঠিকানাসম্বলিত চন্দ্রাবতীর মনোরম চিত্র বীরভানের হস্তগত, চন্দ্রাবতী লাভে মন্ত্রীপুত্র সুতের সহায়তায় বীরভানের নাগের-বাঘের-যক্ষের সাথে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষে জয়লাভ এবং নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অবশেষে চন্দ্রাবতী লাভ – এ কাহিনীই চন্দ্রাবতী কাব্যের কাহিনী ।
সতের শতকের কবি মরদন রচিত কাব্যের নাম ‘নসীরানামা’। এটি দেশীয় প্রচলিত গল্পের কাব্যরূপ। অনেকে এ গ্রন্থকে মৌলিক রচনার স্বীকৃতি দিয়েছেন। কাব্যে নসীরা বিবি কীভাবে প্রতিকূল ঘটনার মধ্যেও পিতৃবন্ধুর পুত্রের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তা বর্ণিত হয়েছে। ভাগ্যের অনিবার্য পরিণতি দেখানোই এই কাব্যের উদ্দেশ্য।
সতের শতকের কবি আলাওল হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সী রচিত হিন্দি প্রেমাখ্যান ‘পদুমাবৎ’ অবলম্বনে রচনা করেন ‘পদ্মাবতী’ কাব্য । কাব্যটি রচনা করেন মাগন ঠাকুরের অনুরোধ, ১৬৮৮ সালে। ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের নায়ক ও নায়িকা হলেন রত্নসেন ও পদ্মাবতী। এ কাব্যে হিরামন নামক একটি শুক পাখির অনেক ভূমিকা আছে। আলাওলের জন্মস্থান চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ (মতান্তরে ফরিদপুরের ফতেয়াবাদ)।
আলাওল আরাকানে গিয়েছিলেন ফিরিঙ্গিদের হাতে বন্দী হয়ে দাস হিসেবে । অনেকগুলো ভাষা জানতেন তিনি । তাছাড়া তিনি সঙ্গীতেও পারদর্শী ছিলেন। এসব গুণের জন্য তিনি রাজদরবারে আনুকূল্য লাভ করেন। প্রথমে তিনি আনুকূল্য পান রাজমন্ত্রী সোলেমানের। এরপর একে একে পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে অমাত্য মাগন ঠাকুর, সৈয়দ মুসা এবং রাজার কাজী সৈয়দ মাসুদের ।
আলাওল রোসাঙ্গ রাজসভার কবি। তাঁর জীবনে মাগন ঠাকুরের প্রভাব অপরিসীম। তাঁর রচিত অন্যান্য কাব্য হলো – ‘সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল’, ‘হপ্তপয়কর’, ‘সিকান্দর নামা’, ‘তোহফা’।
আলাওল ‘তোহফা’ রচনা করেন ১৬৬৩-৬৪ সালে, সুলেমানের অনুরোধে। এটি রোমান্টিক উপাখ্যান নয়, নীতিকাব্য ধরনের ধর্মীয় গ্রন্থ। এটি ফারসি ভাষা থেকে অনূদিত। ‘হপ্তপয়কর’ কবি নিজামীর ফারসি রচনার অনুবাদ ।
‘সয়ফুলমুলুক-বদিউজ্জামাল’ গ্রন্থের কাহিনীর আদি উৎস আলিফ লায়লা বা আরব্য রজনী । বাংলা রোমান্টিক উপাখ্যানধারায় সয়ফুলমুলুক ও বদিউজ্জামাল নামে কাহিনী রচনা করেন দোনা গাজী, চৌধুরী ইব্রাহীম, সালেহ মুহম্মদ প্রমুখ । আলাওলের শেষ কাব্য ‘সেকেন্দারনামা’। এর মূলও নিজামীর রচনা । এ কাব্যের বিষয়বস্তু হলো সম্রাট আলেকজান্ডারের পারস্য বিজয় ।
বৈষ্ণব পদাবলি বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। পদ বা পদাবলি মূলত বৌদ্ধ বা বৈষ্ণবীয় ধর্মের গূঢ় বিষয়ের বিশেষ সৃষ্টি। চতুর্দশ শতকের শেষদিক থেকে এ কবিতা রচিত হতে থাকে । রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা অবলম্বনে এই অমর কবিতাবলির সৃষ্টি। কোনো বিশেষ ধর্মীয় আবেগে রচিত হয়নি বৈষ্ণব পদাবলি। শ্রী চৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩) প্রচার করেন বৈষ্ণব ধর্ম এবং এর পর থেকে বাংলা কবিতায় বৈষ্ণব দর্শন স্থান পেতে থাকে । এদেশে শ্রীচৈতন্যদেব প্রচারিত বৈষ্ণব মতবাদের সম্প্রসারণে এর ব্যাপক বিকাশ। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে এই সৃষ্টিসম্ভারের প্রাচুর্য ও উৎকর্ষপূর্ণ ছিল। এর বিষয়বস্তু হলো রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলা। এতে মূলত স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে | প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। রাধা ও কৃষ্ণের রূপাশ্রয়ে ভক্ত ও ভগবানের নিত্যবিরহ ও নিত্যমিলনের অপরূপ আধ্যাত্মিক লীলা কীর্তিত হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের অনুসারীরা বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেন । শ্রেষ্ঠ চারজন কবি হলেন বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, গোবিন্দ দাস, জ্ঞান দাস। কেবল বৈষ্ণব ধর্মানুসারীরা এগুলো রচনা করেননি, অসংখ্য মুসলমান কবিও রয়েছে যারা | পরম আবেগে বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেন।
বৈষ্ণব পদাবলি সাধারণত লিখে রাখা হত না, তাই অনেক কবিতা হারিয়ে গিয়েছে। বৈষ্ণব পদাবলি যিনি প্রথম সংকলন করেন তাঁর নাম বাবা আউল মনোহর দাস। ষোড়শ শতকের শেষার্ধে তিনি ‘পদসমুদ্র’ গ্রন্থে বৈষ্ণব | পদাবলি সংকলিত করেন। এতে প্রায় পনের হাজার কবিতা ছিল।
বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণ পরমাত্মার প্রতীক আর রাধা জীবাত্মার প্রতীক। বৈষ্ণবেরা ভগবান ও ভক্তের সম্পর্কের স্বরূপ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কৃষ্ণকে পরমাত্মা বা ভগবান এবং রাধাকে জীবাত্মা বা সৃষ্টির রূপক মনে করে তাদের বিচিত্র প্রেমলীলার মধ্যেই ধর্মীয় তাৎপর্য উপলব্ধি করেছেন। ফলে এক প্রাচীন গোপজাতির লোকগাঁথার নায়ক প্রেমিক কৃষ্ণ এবং মহাভারতের নায়ক অবতার কৃষ্ণ কালে কালে লোকস্মৃতিতে অভিন্ন হয়ে উঠে ।
বৈষ্ণব পদাবলিতে পাঁচটি রস আছে – শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর। এ পদাবলিতে বৈষ্ণব তত্ত্বের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিদ্যাপতি ছিলেন মিথিলার রাজসভা কবি। তিনি মৈথিলির কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত হয়েছেন। রাজা শিবসিংহ তাকে ‘কবিকণ্ঠহার’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন। ব্রজবুলি হলো হিন্দি, বাংলা ও প্রাকৃত ভাষার মিশ্রণ অর্থাৎ বাংলা ও মৈথিলি ভাষার মিশ্রণ এবং এক প্রকার কৃত্রিম কবিভাষা। এটি মিথিলার/মথুরার উপভাষা। তিনি বাঙালি না হয়েও এবং বাংলায় কবিতা রচনা না করেও বৈষ্ণব পদাবলির অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তখনকার দিনে মিথিলা ছিল শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্র। বাংলার ছেলেরা জ্ঞানার্জনের জন্য মিথিলা যেত, আর বুক ভরে নিয়ে আসত বিদ্যাপতির কবিতা। এভাবে বিদ্যাপতি হয়েছেন বাংলার কবি। বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা এবং প্রথম অবাঙালি কবি। কবি, রসিক, পণ্ডিত ও ভাষার যাদুকর বিদ্যাপতি সংস্কৃত অবহটঠ ও মৈথিলি বুলিতে । তাঁর জ্ঞান, চিন্তা, রসবোধ ও কাব্যকুলতার সার্থক পরিচয় দান করেছেন।
বিদ্যাপতির ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদের আদলে রবীন্দ্রনাথ তার ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলি রচনা করেছেন। শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথের তরুণ বয়সের এ রচনা ঠিক বৈষ্ণবীয় ব্রজবুলি হয়নি।
বিদ্যাপতির বিখ্যাত বিরহ বিষয়ক পদ-
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর ॥
অন্য একটি পদ :
কি কহিব রে সখি আনন্দ ওর
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর॥
বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা কবি চণ্ডীদাস। তিনি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির রচনা করে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের একজন শ্রেষ্ঠ কবির আসন পেয়েছেন। চণ্ডীদাসের সময় চৌদ্দ শতকের শেষার্ধ থেকে পনের শতকের প্রথমার্ধ। তিনি পূর্ব বাংলার কবি ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি দ্বিজ চণ্ডীদাস নামে খ্যাত। তিনি খাঁটি বাংলা ভাষায় পদ রচনা করেন। চণ্ডীদাসের পদ এতটাই হৃদয়স্পর্শী ছিল যে, স্বয়ং শ্রী চৈতন্যদেব তার পদাবলি শুনে মুগ্ধ হয়েছেন। চণ্ডীদাস রাধাকে কৃষ্ণপ্রেমে আত্মহারা রূপে চিত্রিত করেছেন। কবি রাধার চরিত্রে মিলনের আনন্দের চেয়ে বিচ্ছেদের বেদনাকে তীব্রতর করে রূপ দিয়েছেন। চণ্ডীদাসের বিখ্যাত পঙ্ক্তি :
১. সুনহ মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই
২. সই কেমনে ধরিব হিয়া
আমার বধূয়া আন বাড়ী যায়
আমার আঙিনা দিয়া ॥
৩. গোপন পিরীতি গোপনে রাখিবি সাধিবি মনের কাজ
সাপের মুখেতে ভেকেরে নাচাবি তবে ত রসিক রাজ ॥
কবি বিদ্যাপতির ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ কবি গোবিন্দদাস। আনুমানিক ষোল শতকের তৃতীয় দশকে গোবিন্দদাসের জন্ম। গোবিন্দদাস প্রায় সাত’শ পদ রচনা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তার মধ্যে অল্পকিছু পদ বাংলা হলেও তাঁর অধিকাংশ পদ ব্রজবুলি ভাষায় রচিত। তাঁর পদাবলিতে রাধা চরিত্রের সুষ্ঠু বিকাশ ও পরিণতি লক্ষ করা যায় । তিনি ছিলেন ভক্ত কবি। অভিসার নির্ভর পদগুলোতে তাঁর কৃতিত্ব উজ্জ্বলভাবে ফুটে ওঠেছে। তিনি অলংকারশাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন এবং কল্পনাকে চমৎকার অলঙ্কার পরিয়ে দিয়েছেন। ‘গীতগোবিন্দ’ তাঁর বিখ্যাত পদাবলি সাহিত্য। এটি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত।
তাঁর বিখ্যাত রাধা রূপ বিষয়ক পদ হলো-
যাঁহা যাঁহা নিকসয়ে তনু তনু জ্যোতি তাঁ
হা তাঁহা বিজুরি চমকময় হোতি ॥
চৈতন্য-পরবর্তীকালের পদকর্তাদের মধ্যে জ্ঞানদাস একজন শ্রেষ্ঠ পদকর্তা। আনুমানিক ষোল শতকে বর্ধমান জেলায় কবি জ্ঞানদাসের জন্ম । তিনি চণ্ডীদাসের বাকবৈশিষ্ট্য ও কাব্যরীতি তাঁর রচনায় দেখা গেলেও রাধাকৃষ্ণের প্রেমবিষয়ক পদরচনায় তাঁর মৌলিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়। চণ্ডীদাসের এই ভাবশিষ্য ব্রজবুলি ও বাংলায় পদ রচনা করলেও তাঁর বাংলা পদগুলোই অসাধারণ হয়েছে।
তাঁর বিখ্যাত কৃষ্ণানুরাগ বিষয়ক পদ হল—
রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর ।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর ॥
অন্য বিখ্যাত পদ –
সুখের লাগিয়া এ ঘর বান্ধিনু অনলে পুড়িয়া গেল ।
অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল ॥
নাথ সম্ভবত তিব্বতী শব্দ এবং ‘নাথ’মাত্রই অভিধায় বৌদ্ধ সম্পৃক্ত। তাঁতিশ্রেণির বৌদ্ধরাই প্রধানত নাথপন্থী। এরা নাথযোগী বা যুগী নামে পরিচিত। এদেরই একটি বিরাট অংশ ইসলাম বরণ করে জোলা (জুলহা) নামে পরিচিত হয়েছে।
জর্জ প্রিয়ার্সন উত্তরবঙ্গের কৃষকদের মুখ হতে যে নাথ সাহিত্য সংগ্ৰহ করেছিলেন তার ভাষা অর্বাচীনকালের। এর ভাষা প্রাকৃত-প্রধান বাংলা । বিষয়বস্তুর প্রাচীনতায় এটি আদি যুগের সাহিত্য বলে ধারণা করা হলেও ভাষার অর্বাচীনতার জন্য একে মধ্যযুগের অন্তর্গত বলে বিবেচনা করা হয় ।
আদিনাথ শিব, মীননাথ, হাড়িপা, কানুপা – এই চারজন সিদ্ধাচার্যের মাহাত্ম্যসূচক অলৌকিক কাহিনী অবলম্বনে নাথ সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। দশম ও একাদশ শতক ছিল নাথ ধর্মের বিকাশের ঐতিহাসিক যুগ এবং নাথ ধর্মের এই শ্রেষ্ঠ যুগেই নাথ সাহিত্যের সূচনা। নাথ সাহিত্যে আদিনাথ শিব,পার্বতী, মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা, কানুপা, ময়নামতি ও গোপীচন্দ্রের | আখ্যান প্রভৃতি সাহিত্যিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য ।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে জর্জ প্রিয়ার্সন রংপুর থেকে সংগৃহীত একটি গীতিকা ‘মানিক রাজার গান’ নামে প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে উত্তর ও পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল হতে একই কাহিনীভিত্তিক পুঁথি আবিষ্কৃত হয়েছে। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ শেখ ফয়জুল্লাহর ‘গোরক্ষবিজয়’ আবিষ্কার করেন।। ‘গোরক্ষবিজয়’ এর ষোলখানা পুঁথি সংগৃহীত হয়েছে।
এছাড়া ‘গোর্খবিজয়’ প্রকাশ করেছেন পঞ্চানন মণ্ডল। এসব গ্রন্থ থেকে নাথ সাহিত্যের পরিচয় মেলে। গোরক্ষনাথের মহিমা বিষয়ক কাহিনী এবং ময়নামতী ও গোপীচন্দ্রের আখ্যান নাথ সাহিত্যের সাহিত্যিক নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য । নাথ ধর্মের সাধনতত্ত্ব ও প্রাসঙ্গিক গল্পকাহিনী এতে বিধৃত।
নাথ সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি হলেন শেখ ফয়জুল্লাহ, শ্যামদাস সেন, ভীম সেন, ভবানী দাস, শুকুর মহম্মদ, দুর্লভ মল্লিক। নাথ সাহিত্যের কাহিনী দুভাগে বিভক্ত –
১. সিদ্ধাদের ইতিহাস, গোরক্ষনাথ এবং সিদ্ধাচার্যদেব কর্তৃক মীননাথকে নারীমোহ থেকে উদ্ধারের ইতিহাস।
২. রাণী ময়নামতি ও তার পুত্র গোপীচন্দ্রের কাহিনী।
কবি | সাহিত্যকর্ম |
---|---|
শেখ ফয়জুল্লাহ | গোরক্ষবিজয় |
শ্যামদাস সেন | মীনচেতন |
দুর্লভ মল্লিক | গোবিন্দ্ৰচন্দ্ৰ গীত |
ভবানী দাস | ময়নামতির গান |
শুকুর মাহমুদ | গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস |
ভীমসেন রায় | গোর্খ বিজয় |
মর্সিয়া শব্দটি আরবি । এর অর্থ শোক কাব্য। মুসলমান সংস্কৃতির নানা বিষাদময় কাহিনী তথা শোকাবহ ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে মর্সিয়া সাহিত্যের উদ্ভব হয়েছে। এ সাহিত্য প্রধানত কারবালার প্রান্তরে শহীদ ইমাম হোসেন (রা) ও অন্যান্য শহীদদের উপজীব্য করে লেখা। পারস্য দেশীয় বণিক, দরবেশ, কবি, পণ্ডিত প্রভৃতি আগমণকারী লোকদের অনুপ্রেরণায় এ সাহিত্যের প্রসার ঘটে। এছাড়া মুসলিম খলিফা ও শাসকদের বিজয় অভিযানের বীরত্বগাথা এ শ্রেণির কাহিনীতে স্থান পেয়েছে। ‘জঙ্গনামা’ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ কাব্যের বিষয় যুদ্ধবিগ্রহ। মুঘল আমলে যে সব কবি মর্সিয়া | সাহিত্য রচনা করেছেন তারা হলেন শেখ ফয়জুল্লাহ, দৌলত উজির বাহরাম খান, মুহম্মদ খান, হায়াৎ মামুদ, জাফর হামিদ প্রমুখ।
ষোল শতকের কবি শেখ ফয়জুল্লাহ হলেন নাথ সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি । তাঁর প্রধান কাব্যগ্রন্থ হলো ‘গোরক্ষবিজয়’। ড. এনামুল হক মনে করেন, গোরক্ষবিজয় সত্যপীর কাহিনীর পূর্ববর্তী রচনা। ‘ভারত পাঁচালী’ রচয়িতা কবীন্দ্র দাসের মুখে গল্প শুনে কবি ফয়জুল্লাহ তাঁর কাব্যটি রচনা করেন। নাথ বিশ্বাস-জাত যোগের মহিমা এবং নারী ব্যভিচার প্রধান সমাজচিত্রের বর্ণনা। | গোরক্ষবিজয়-এর উপজীব্য বিষয়। এটি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করেছেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।
মর্সিয়া সাহিত্যের আদি কবি শেখ ফয়জুল্লাহকে মনে করা হয়। তিনি ‘জয়নবের চৌতিশা’ নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। সম্ভবত এটি প্রথম মর্সিয়া ধরনের কাব্য । বাংলা চৌত্রিশটি বর্ণের প্রত্যেকটিকে এক বা একাধিক চরণের আদ্যবর্ণরূপে ব্যবহার করে যে পদ রচনা করা হয় তাকে চৌতিশা বলে । শেখ ফয়জুল্লাহ এ কাব্যে বিবি জয়নবের বিলাপ বর্ণনা করেছেন । কারবালার করুণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিবি জয়নবের বিলাপের বর্ণনা এই ক্ষুদ্র কাব্যের উপজীব্য। এতে কেবল একটিমাত্র চরিত্রের অবতারণ করা হয়েছে।
রংপুর কাঁটাদুয়ার পীর ইসমাইল গাজীর বিষয় নিয়ে কবি শেখ ফয়জুল্লাহ রচনা করেন ‘গাজীবিজয়’। ইসমাইল গাজী একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কুরাইশ বংশজাত আরব সন্তান এবং অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। বাংলার তৎকালীন সুলতান রুকনউদ্দিন বরবাক শাহের (১৪৫৯-৭৪ খ্রি.) সেনাপতি হিসেবে ইসমাইল গাজী উড়িষ্যার বিভিন্ন স্থানে । বিদ্রোহ দমন করেন (অলৌকিক কর্মকাণ্ডে কথিত বিবরণ রয়েছে)। শেষে ঘোড়াঘাটের সীমান্তদুর্গের অধিনায়ক ভান্দসী রায়ের ষড়যন্ত্রে সুলতানের আদেশে ১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ইসমাইল গাজীকে হত্যা করা হয়। তাঁর মস্তক | রংপুরের কাঁটাদুয়ারে এবং মস্তকহীন দেহ মান্দারনে (হুগলী) সমাহিত করা হয় । ফলে দুটি পৃথক স্থানে ইসমাইল গাজীর স্মৃতি ও মাজার উপলক্ষ করে দুটি ‘পিরস্থান’ গড়ে ওঠে।
শেখ ফয়জুল্লাহর নীতিকথা বিষয়ক কাব্য হলো ‘সুলতান জমজমা’। এতে আছে তিনটি উপকাহিনী : হযরতের উপর আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের বয়ান, সুলতান জমজমার কথা ও প্রলয়কালের দুর্দশার কথা। তখন সাধারণ্যে সুলতান জমজমার কাহিনী জনপ্রিয়তা লাভ করে। আরবি-ফারসি কাসাসুল আম্বিয়া কেতাবের উৎস থেকে জমজমার উপকাহিনী তিনটি গৃহীত ।
মুহম্মদ খান রচিত গ্রন্থের নাম ‘মক্তুল হোসেন’। এই কাব্যগ্রন্থটি ফারসি ‘মঞ্জুল হোসেন’ কাব্যের ভাবানুবাদ। মুহম্মদ খান চট্টগ্রামের কবি ছিলেন। ১৬৪৫ সালে তিনি ‘মক্তুল হোসেন’ রচনা করেন ।
হায়াৎ মামুদ অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত কবি। তিনি রংপুর জেলার ঝাড়বিশিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত ‘জঙ্গনামা’ কাব্যটি ফারসি কাব্যের অনুসরণে রচিত। গ্রন্থটি ১৭২৩ সালে রচিত । মর্সিয়া ধারার হিন্দু কবি হলেন রাধারমণ গোপ। তিনি ‘ইমামগণের কেচ্ছা’ ও ‘আফনামা’ নামে দুটি কাব্য রচনা করেন। দৌলত উজির বাহরাম খান মর্সিয়া ধারার জঙ্গনামা কাব্য রচনা করেন। কারবালার বিষাদময় কাহিনী এর উপজীব্য।
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের তিরোধানের মাধ্যমে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং ১৮৬০ সালে মাইকেল মধুসুদনের সদর্প আগমনের মাধ্যমে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে।ভারত চন্দ্রের মৃত্যুর পর ১৮৬০ সালে আধুনিকতার যথার্থ বিকাশের পূর্ব পর্যন্ত এই ১০০ বছর বাংলাা কাব্যের ক্ষেত্রে উৎকর্ষপূর্ণ নিদর্শন বিদ্যমান নেই।অর্থাৎ এ সময়ে সাহিত্য জগতে চলছিল বন্ধ্যাকাল, এজন্য এ সময়টুকুকে বলা হয় ‘অবক্ষয় যুগ’ বা যুগ সন্ধিক্ষণ। এ সময় কলকাতার হিন্দু সমাজে ‘কবিওয়ালা’ এবং মুসলিম সমাজে ‘শায়ের’ এর উদ্ভব ঘটে।ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে যুগ সন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়।
আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এবং উনিশ শতকের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের মুখে কলকাতার হিন্দু সমাজে ‘কবিওয়ালা’ এবং মুসলমান সমাজে ‘শায়ের’-এর উদ্ভব ঘটে। ভারতচন্দ্রের মৃত্যুকাল থেকে ঈশ্বরচন্দ্রের সময় পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করেছিল। এ কবিয়াল ও শায়েররা যে সাহিত্য রচনা করেছে তাকে দোভাষী সাহিত্য বলে । দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্কের মাধ্যমে যে গান অনুষ্ঠিত হতো তাই কবিগান।দুই দলের প্রতিযোগিতাই এর বৈশিষ্ট্য ছিল। যারা এ গান গাইত ( বিশেষত হিন্দু) , তাদের বলা হতো কবিয়াল। ১৮৫৪ সালে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রথম কবিগান সংগ্রহ করতে শুরু করেন এবং ’সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।গোঁজলা গুই হলেন কবিগানের আদিগুরু । কবি ঈশ্বরগুপ্তের মতে, তার গান হতে কবিগানের সূচনা হয়।
কবি এন্টনি ফিরিঙ্গি হলেন পর্তুগিজ খ্রিষ্টান। তিনি বিধবা ব্রাহ্মণী বাঙালি বিয়ে করেছিলেন। তিনিও বাংলার কবি হয়েছিলেন, তবে তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফিরিঙ্গি শব্দটি।
কবিওয়ালাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গোঁজলা গুই, ভবানী বেনে, রাসূ-নৃসিংহ, হরু ঠাকুর, কেষ্টা মুচি, নিতাই বৈরাগী, ভোলা ময়রা, এন্টনি ফিরিঙ্গি, নীলমণি পাটনী প্রভৃতি। এদের অধিকাংশই অন্ত্যজ শ্রেণির।
শায়ের আরবি শব্দ এবং এর অর্থ কবি। মুসলমান সমাজে মিশ্র (দোভাষী) ভাষারীতির পুঁথি রচয়িতাদের শায়ের বলা হত।‘শায়ের’-দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ফকির গরীবুল্লাহ, সৈয়দ হামজা, মোহাম্মদ দানেশ।
দোভাষী পুঁথি সাহিত্য বাংলা, ফারসি, আরবি, হিন্দি, ইংরেজি প্রভৃতি নানা ভাষার সংমিশ্রণে রচিত । এ সাহিত্য কলকাতার সস্তা প্রেস থেকে বের হত বলে একে বটতলার পুঁথি বলা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রচিত ‘আরবি-ফারসি’ শব্দ মিশ্রিত ইসলামী চেতনা সমৃদ্ধ সাহিত্য কলকাতার সস্তা ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত হয়ে এই ধারার কাব্য দেশময় প্রচারিত হয়েছিল বলে একে ‘বটতলার পুঁথি’ নামে অভিহিত করা হয়।রেভারেন্ড জে. লং এ শ্রেণির রচনাকে ‘মুসলমানি বাংলা সাহিত্য’ বলে অভিহিত করেন।
ফকির গরীবুল্লাহ্ দোভাষী পুঁথি সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় কবি। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো ‘জঙ্গনামা’ । তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো ‘সোনাভান’, ‘আমীর হামজা’, ‘ইউসুফ জোলেখা’, ‘সত্যপীরের পুঁথি’ । ফকীর গরীবুল্লাহ তাঁর ‘আমির হামজা’ কাব্যটি জীবদ্দশায় শেষ করতে পারেননি। কাব্যটি শেষ করেন সৈয়দ হামজা ।
পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম কবি হলেন সৈয়দ হামজা। কবি সৈয়দ হামজা রচিত গ্রন্থ হলো ‘মধুমালতী’, ‘জৈগুনের পুঁথি’, ‘হাতেম তাঈ’ । মোহাম্মদ দানেশ রচনা করেছেন ‘চাহার দরবেশ’, ‘গুলবে সানোয়ারা’। কবি আবদুল হাকিম ‘গাজী কালু চম্পাবতী’ রচনায় বিশিষ্টতা দেখিয়েছেন ।
রামনিধি গুপ্ত (নিধুবাবু) বাংলা টপ্পা গানের জনক। তাঁর অমর পঙ্ক্তি-
নানান দেশের নানান ভাষা,
বিনে স্বদেশি ভাষা পুরে কি আশা ।
বাংলা গানের ধারায় প্রথম যে গান ধর্মনিরপেক্ষ তা হলো রামনিধি গুপ্তের টপ্পা গান । তিনি চাকরি করতের লখনৌ। পাঞ্জাবী টপ্পার ক্ষিপ্ত গলার কাজকে তিনি বাংলায় খানিকটা মন্থর করে রচনা করেন । বাংলা গানের তাবৎ পূর্বসূরীদের অগ্রাহ্য করে তিনি গান লিখলেন দেবতার বদলে মানুষকে নিয়ে। প্রেম ছাড়া তার রচনায় স্বদেশিকতার ক্ষীণ আভাসও পাওয়া গিয়েছিলো ।
নিধুবাবুর সময়ে কালিদাস চট্টোপাধ্যায়ের ওপরে কালী মীর্জাও টপ্পা গান লিখেছিলেন । রামমোহন রায় কালী মীর্জার কাছে গান শিখেছিলেন । কবিগান সেকালে গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। সে কারণে এন্টনি ফিরিঙ্গি (এন্টনি হেন্সম্যান) বিদেশি হয়েও কবিয়াল হয়েছিলেন।
পাাঁচালী গানের জনপ্রিয় কবি দাশরথি রায়। তিনি দাশু রায় নামে খ্যাত ছিলেন।উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পাঁচালী গান এদেশে জনপ্রিয় হয়েছিল।
জাতীয় সংস্কৃতির যে সকল সাহিত্য গুণসম্পন্ন সৃষ্টি প্রধানত মৌখিক ধারা অনুসরণ করে অগ্রসর হয় তাকে লোকসাহিত্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । ডাক ও খনার বচনকে লোকসাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয় । আবহমান কাল হতে জনসাধারণের মুখে মুখে প্রচলিত গান, ছড়া, প্রবাদ ও গাঁথাকাহিনীই লোকসাহিত্য। মানব জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ- বেদনা, ইতিহাস ও সমাজচিত্র, অতীত সমাজের চিন্তাভাবনা, জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও ধ্যান-ধারণা লোকসাহিত্যের বিষয়বস্তু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। লোকের মুখে মুখে প্রচলিত কাহিনী, ছড়া, গান কথা, গীতিকা, ধাঁধা, গাঁথা কাহিনী, প্রবাদ প্রভৃতি লোকসাহিত্যের উপাদান ও নিদর্শন ।
একশ্রেণির আখ্যানমূলক লোকগীতি বাংলাসাহিত্যে ‘গীতিকা’ নামে অভিহিত। ইরেজিতে একে বলা হয় ‘ব্যালাড’। ব্যালাড বলতে আখ্যানমূলক লোকসঙ্গীতকে বুঝায়। Ballad শব্দটি ফরাসি Ballet বা নৃত্য শব্দ থেকে এসেছে। বাংলাদেশে সংগৃহীত গীতিকা তিন ধরনের – নাথ গীতিকা, ময়মনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা।
নাথ গীতিকা এক ধরনের ঐতিহাসিক রচনা। স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন ১৮৭৮ সালে রংপুর জেলার কৃষকদের নিকট থেকে এগুলো সংগ্রহ করে নাম দেন ‘মানিক রাজার গান’। এটি রাণী ময়নামতি ও তাঁর পুত্র গোপীচন্দ্রের কাহিনী অবলম্বনে রচিত। ইতিহাসের কোনো বিস্মৃতির যুগে এই গীতিকার নায়ক রাজা গোপীচাঁদ বা গোবিন্দচন্দ্র মায়ের নির্দেশে যৌবনে দুই নব পরিণীতা বধূ প্রাসাদে রেখে সন্ন্যাস অবলম্বন – এই কাহিনীকে কেন্দ্ৰ করে নাথ গীতিকার উদ্ভব।
ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে যেসব গীতিকা সংগৃহীত হয়েছিল তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘মৈমনসিংহ গীতিকা ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’ নামে চারখণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাংশে মৈমনসিংহের বিল-হাওর-নদীঅঞ্চলের লোককবিগণের রচনা। এখানে কোচ, গারো, হাজং, রাজবংশী প্রভৃতি মাতৃতান্ত্রিক উপজাতির বাস। এ সমাজে নারীর স্বাধীন প্রেমের যে স্বীকৃতি রয়েছে তার অনুসরণে গীতিকাগুলোর নারী চরিত্রের রূপায়ন লক্ষ করা যায়। ময়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রহ করে বিখ্যাত হয়ে আছেন চন্দকুমার দে, আশুতোষ চৌধুরী, বিহারীলাল সরকার, নগেন্দ্রচন্দ্র দে, জসীমউদদীন প্রমুখ। এরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থানুকূল্যে এ শ্রমসাধ্য কাজে নিয়োজিত হয়েছিলেন। চন্দকুমার দে ময়মনসিংহ গীতিকার পালাগানগুলোর সংগ্রাহক। ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্বের ২৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
মৈমনসিংহ গীতিকার কাহিনীগুলো প্রেমমূলক এবং তাতে নারী চরিত্রের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। নারীর ব্যক্তিত্ব, সতীত্ব, স্বাতন্ত্র্য্য, আত্মবোধ প্রভৃতি ছিল ময়মনসিংহ গীতিকার বৈশিষ্ট্য । এর কাহিনীগুলো হলো – মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা, দেওয়ানা মদিনা। এগুলো ছাড়া ড. দীনেশ চন্দ্র সেন সংকলিত পূর্ববঙ্গ গীতিকার তিনখণ্ডে প্রকাশিত চুয়াল্লিশটি গীতিকার মধ্যে ত্রিশটি গীতিকাই পূর্ব ময়মনসিংহ থেকে সংগৃহীত।
মনসুর বয়াতি রচিত’ দেওয়ানা মদিনা’ পালাটি ময়মনসিংহ গীতিকার অন্যতম গীতিকা হিসেবে সমাদৃত। বানিয়াচঙ্গের দেওয়ান সোনাফরের পুত্র আলাল ও দুলালের বিচিত্র জীবন কাহিনী এবং দুলাল ও গৃহস্থকন্যা মদিনার প্রেমকাহিনী দেওয়ানা মদিনার বিষয়বস্তু। এ গীতিকায় নারী হৃদয়ের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য সার্থকতা সহকারে রূপায়িত হয়েছে।
গীতিকাগুলোর মধ্যে মহুয়া পালাটিতে ময়মনসিংহ গীতিকার বৈশিষ্ট্য চমৎকারভাবে ফুটে উঠে। বেদের অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে মহুয়ার সাথে বামনকান্দার জমিদার ব্রাহ্মণ যুবক নদের চাঁদের দুর্জয় প্রণয়কাহিনী অবলম্বনে পালাটি রচিত। পালাটির রচয়িতা দ্বিজ কানাই, সংগ্রহ ও বর্ণনা করেছেন পল্লিকবি জসীমউদ্দীন ।
পূর্ববঙ্গ গীতিকা নামে গীতিকাগুলোর কিছু ময়মনসিংহ থেকে এবং অবশিষ্টগুলো নোয়াখালী-চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সংগৃহীত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – নিজাম ডাকাতের পালা, কাফন চোরা, চৌধুরীর লড়াই, ভেলুয়া, নুরুন্নেহা ও কবরের কথা, কমল সওদাগর, সুজ তনয়ার বিলাপ উল্লেখযোগ্য ।
গদ্যের মাধ্যমে কাহিনি বর্ণিত হলে তাকে লোককথা বা লোককাহিনী বলে । ইংরেজিতে একে বলে Folklore. কাহিনীগুলো কাব্যে রূপায়িত হলে ‘গীতিকা’ এবং গদ্যে বর্ণিত হলে তা ‘কথা’ নামে পরিচয় লাভ করে। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে, লোককথা তিন প্রকার – রূপকথা, উপকথা, ব্রতকথা ।
রূপকথায় নানা অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য ঘটনা ভীড় করে । বাস্তব রাজ্যের সাথে এর সম্পর্ক নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গল্পের ঐক্য লক্ষণীয়। কোনো অপুত্রক রাজার দৈববলে পুত্র লাভ, ভাগ্যান্বেষণে রাজপুত্রের দেশান্তরে গমন এবং বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সাফল্য অর্জন, পরিণামে রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজ্য লাভ করে সুখে কালযাপন এ ধরনের কাহিনীর কাঠামোর – উপর রূপকথার ভিত্তি ও বিকাশ। ইংরেজিতে রূপকথাকে বলে Fairy Tales. রূপকথা সংগ্রহ করেছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী প্রমুখ। দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের সংগৃহীত রূপকথার । নাম ‘ঠাকুরমার ঝুলি’, ‘ঠাকুরদাদার ঝুলি’। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর রূপকথা সংগ্রহের নাম ‘টোনাটুনির বই’।
পশুপাখির কাহিনি অবলম্বনে উপকথা গড়ে উঠেছে। কৌতুক সৃষ্টি এবং নীতি প্রচারের জন্য এগুলোর সৃষ্টি। এতে মানব চরিত্রের মতই পশুপাখির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে বক্তব্য পরিবেশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেয়েলি ব্রতের সঙ্গে সম্পর্কিত কাহিনী অবলম্বনে ব্রতকথার বিকাশ ঘটেছে। এসব কাহিনীতে ধর্মবোধের কথা বলা হলেও তাতে মেয়েদের জাগতিক কল্যাণ নিহিত। ব্রতকথা গার্হস্থ্যকর্ম সাধনে সহায়ক। গার্হস্থ্য সুখসমৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এর লক্ষ্য । হারামনি প্রাচীন লোকগীতি। এটি সংগ্রহ করেছেন মোহাম্মদ মনসুরউদ্দিন ।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন পাঠান সুলতানগণ । মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের কয়েকজন পৃষ্ঠপোষক হলেন রুকনউদ্দিন বরবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪), শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ । (১৪৯৩-১৫১৯), নুশরাত শাহ (১৫১৯-১৫৩২), আলাউদ্দিন হোসেন শাহ । রুকনউদ্দিন বরবক শাহের আমলে কবি মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ লিখতে শুরু করেন। বরবক শাহ মালাধর বসুকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি দেন। শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের সময়ে মালাধর বসু ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ লেখা সমাপ্ত করেন। ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ শ্রীকৃষ্ণের প্রণয়লীলা বর্ণিত কাব্য।
বিজয়পণ্ডিত ইলিয়াস শনি শাসনামলে মহাভারত রচনা করেন। হুসেন শাহের রাজদরবারে খ্যাতনামা কবিগণ হলেন মালাধর বসু, বিপ্রদাস, বিজয়গুপ্ত, যশোরাজ প্রমুখ। বরিশালের কবি বিজয়গুপ্ত সুলতান হুসেন শাহের আমলে রচনা করেন ‘পদ্মপুরাণ’। হুসেন শাহের সেনাপতি পরাগল খানের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রামের কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর বাংলায় মহাভারত অনুবাদ করেন। কবি শ্রীধর ফিরোজ শাহের আমলে ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য রচনা করেন । ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’-এর রচয়িতা মালাধর বসু একমাত্র কবি যিনি গৌড়েশ্বরের নিকট থেকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি পেয়েছিলেন। কাব্যের আত্মপরিচয় অংশে তিনি লিখেছিলেন –
গুণ নাহি অধম মুঞি নাহি কোনো জ্ঞান
গৌড়েশ্বর দিল নাম গুণরাজ খান ।।
বাংলা সাহিত্যে ইতিহাস বিষয়ক প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ লিখেন দীনেশচন্দ্র সেনগুপ্ত।
রচয়িতা : মালাধর বসু (১৫শ-১৬শ শতক)
বিষয়বস্তু : শ্রীকৃষ্ণবিজয় একটি আখ্যানকাব্য। এটি সংস্কৃত ‘ভাগবত’ এর দশম ও একাদশ অধ্যায় অনুসরণে রচিত। ভাগবতে হিন্দুধর্মের তত্ত্বকথা ও কৃষ্ণের জীবনবৃত্তান্ত আছে । শ্রীকৃষ্ণবিজয়ে কৃষ্ণের জন্ম থেকে মহাপ্রয়াণ পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। মালাধর বসু মূল উৎসের পাশাপাশি অন্যান্য পুরাণ ও লোককাহিনী থেকেও উপাদান গ্রহণ করেন। এজন্য শ্রীকৃষ্ণবিজয় নিছক অনুবাদ গ্রন্থ না হয়ে একটি মৌলিক কাব্য হয়ে উঠেছে।
রচয়িতা : অমরসিংহ। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি সম্ভবত ৪৫0 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের লোক ছিলেন।
বিষয়বস্তু : সংস্কৃত ভাষায় রচিত এটি প্রাচীন শব্দকোষ জাতীয় গ্রন্থ। গ্রন্থটি প্রচলিত অভিধান জাতীয় কিছু নয় । বাছাই করা শব্দের সংগ্রহ বা সংকলন মাত্র । গ্রন্থটি আদ্যোপান্ত পদ্যে রচিত।
রচয়িতা : কৌটিল্য । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মন্ত্রী বিষ্ণুগুপ্তই কৌটিল্য বা চাণক্য নামে পরিচিত ছিলেন । চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৪ অব্দ – খ্রিষ্টপূর্ব ২৯৮ অব্দ ।
বিষয়বস্তু : অর্থশাস্ত্র রাজনীতি বিষয়ে প্রাচীনতম ও সর্বাপেক্ষা প্রামাণিক গ্রন্থ । প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকেই অর্থশাস্ত্র বলা হতো। এ গ্রন্থে রাজার কর্তব্য, মন্ত্রীর কাজসহ একটি রাষ্ট্রের সার্বিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কার্যাবলির পদ্ধতি ও কৌশল লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
রচয়িতা : সংকলক রাজা রাধাকান্ত দেব এবং সম্পাদক করুণাসিন্ধু বিদ্যানিধি ।
বিষয়বস্তু : শব্দকল্পদ্রুম সংস্কৃত অভিধান। সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের পরিশ্রমে আট খণ্ডে এ কোষগ্রন্থটি সংকলিত হয় । এর কাজ শুরু হয় ১৮০৩ সালে । কল্পদ্রুম শব্দের অর্থ কল্পবৃক্ষ অর্থাৎ বৃক্ষের নিকট যা কামনা করা হয় তাই পাওয়া যায় । এমন কোনো সংস্কৃত শব্দ নেই যা এ কোষগ্রন্থটিতে পাওয়া যায় না। সংস্কৃত ভাষায় গদ্যে রচিত সর্ববৃহৎ এ অভিধানটি বাংলা হরফে মুদ্রিত । তবে প্রতিটি সংস্কৃত শব্দের অর্থ, বুৎপত্তি এবং সংস্কৃত ভাষায় তার প্রয়োগ দেওয়া আছে। রাধাকান্ত দেবের পর আজ পর্যন্ত এমন আর দ্বিতীয় সংস্কৃত অভিধান রচিত হয়নি ।
রচয়িতা : গোলাম হোসেন সলিম জায়েদপুরী। রচনাকাল ১৭৮৮ সাল । বিষয়বস্তু : এটি ফারসি ভাষায় লিখিত বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসগ্রন্থ। ১২০৪-০৫ সালে বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয় । থেকে ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনাবলির বিবরণযুক্ত এই গ্ৰন্থ মুসলিম বাংলার পরিপূর্ণ ইতিহাস বলে বিবেচিত।
রচয়িতা : আলী রজা ওরফে কানু ফকির
বিষয়বস্তু : আগম ও জ্ঞানসাগর সুফি পন্থাবিষয়ক কাব্যগ্রন্থ। এতে সৃষ্টিতত্ত্ব, আল্লাহতত্ত্ব, প্রেম ও ভক্তি, দেহতত্ত্ব ইত্যাদি জটিল ও সূক্ষ্ম দরবেশী তত্ত্বকথা বর্ণিত হয়েছে।
রচয়িতা : সন্ধ্যাকর নন্দী । রাজা মদনপালের (১১৪৩-১১৬২ খ্রি:) সময়ে রচিত।
বিষয়বস্তু : রামচরিতম একটি সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটির গুরুত্ব এই যে, এটি একাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত । বাংলার অবস্থার ওপর আলোকপাত করে। রামচরিতম বরেন্দ্রের একজন কবি কর্তৃক বাংলায় বসে রচিত একমাত্র সংস্কৃত গ্রন্থ, যার মূল বিষয়বস্তু সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনা। এ কারণে গ্রন্থটি পরবর্তীতে পাল যুগের ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত।
রচয়িতা : আবুল ফজল। তিনি ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ, সচিব ও প্রধানমন্ত্রী।
বিষয়বস্তু : আইন-ই-আকবরী সমকালীন ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি ! অতি প্রামাণ্য আকরিক গ্রন্থ। গ্রন্থটি ফারসিতে রচিত। এতে আবুল ফজল আকবরের শাসনকালীন ভারতবর্ষের শাসনপদ্ধতির বিস্তৃত বিবরণ যেমন লিপিবদ্ধ করেছেন, তেমনি সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থারও পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়েছেন।
রচয়িতা : মহাকবি আলাওল ।
বিষয়বস্তু : মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অনুবাদ কাব্য পদ্মাবতী। রোসাঙ্গ রাজসভায় কবি আলাওল হিন্দি সাহিত্যের রোমান্টিক কাব্য মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবৎ’ এর বাংলা অনুবাদ করেন পদ্মাবতী। কবি আরাকানের রাজসভায় প্রেমকাব্য হিসেবে একে উপস্থাপিত করলেও তৎকালের রুচি অনুযায়ী তিনি মূলের অনেক কিছু গ্রহণ করেছেন। ফলে অনুবাদ অনেকটা মৌলিক রূপ লাভ করেছে। পদ্মাবতীর সাথে রত্নসেনের প্রণয়-পরিণয় ও নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে এগিয়েছে এ কাব্যের কাহিনি ।
রচয়িতা : কবি নয়নচাঁদ ঘোষ । সতের শতকে রচিত।
বিষয়বস্তু : চন্দ্রাবতী ৩৫৪ লাইনবিশিষ্ট একটি গাঁথাকাব্য । কাহিনীর নায়িকা চন্দ্রাবতী বাস্তবজীবনে নিজেও সুকবি এবং বাংলা রামায়ণের রচয়িতা। জয়চন্দ্রের সাথে চন্দ্রাবতীর প্রণয় এবং জয়চন্দ্রের অন্যত্র বিবাহ ও শেষ পর্যন্ত চন্দ্রাবতীর সামনে জয়চন্দ্রের মর্মান্তিক মৃত্যু ‘চন্দ্রাবতী’ কাব্যের উপজীব্য । সহজ সরল পয়ার ছন্দে রচিত গাঁথা কাব্যটি শিল্পসফল ।
রচয়িতা : রাজশেখর (আনুমানিক ৮৮০-৯২০ খ্রিষ্টাব্দ) ।
বিষয়বস্তু : কাব্যমীমাংসা গ্রন্থটি সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রে একটি বিখ্যাত ও বহুল আলোচিত গ্রন্থ। এতে কাব্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থটি সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যের পঠন-পাঠনে আজও গুরুত্বের সাথে ব্যবহৃত হয় ।
Right forms of verbs গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো 1. Present Indefinite Tense এর subject যদি…
❐ শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে: ➺ ১০২তম ❐ বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচকে: ➺ ৭৫তম ❐ বৈশ্বিক ক্ষুধা…
2024 সালের বিভিন্ন পুরুষ্কার : নবেল পুরস্কার ২০২৩ 🏆 চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার ২০২৩ বিজয়ীদের তালিকা…
গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন-বৈঠক-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন-বৈঠক-২০২৪ অনুষ্ঠিত হবে ❐ ১৬তম ব্রিকস সম্মেলন ২০২৪ কোথায় অনুষ্ঠিত…
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩’ ঘোষণা করা হয়।…
New Microsoft PowerPoint Presentation
No posts found.
+ | Academic |
+ | BANK GK |
+ | Exclusive Model Test |
+ | আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী |
+ | OIC |
+ | খেলা সমাচার -সাফ গেমস |
+ | খেলা সমাচার টুয়োন্টি ২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ |
+ | খেলা সমাচার-এশিয়া কাপ ক্রিকেটে |
+ | খেলা সমাচার-বিস্ব অলিম্পিক |
+ | খেলা সমাচার-বিস্ব কাপ ক্রিকেট |
+ | খেলা সমাচার-বিস্ব কাপ ফুটবল |
+ | জাতিসংঘের সংগঠন -সদর দপ্তর- গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য |
+ | পুরাতন ও বর্তমান নাম |
+ | বিভিন্ন আন্তজাতিক দপ্তর |
+ | বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস |
+ | বিভিন্ন দেশের আইনসভা |
+ | বিভিন্ন দ্বীপ দেশের অবস্থান |
+ | বিভিন্ন নদী /বিমান/সমুদ্র বন্দর |
+ | বিভিন্ন প্রণালী |
+ | বিভিন্ন বিশ্বযুদ্ধ -আন্তর্জাতিক বিরোধ-গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অপারেশন-সীমারেখা |
+ | বিভিন্ন সীমারেখা |
+ | বিভিন্ন স্থাপনা |
+ | বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতাসমূহ |
+ | বৈশ্বিক ইতিহাস, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, ভূ-রাজনীতি |
+ | ভাষা ও মুদ্রা |
+ | ভৌগোলিক উপনাম |
+ | সকল অন্দোলন |
+ | সার্ক |
+ | আপডেট তথ্য |
+ | আর্ন্তজাতিক লেখক/প্রকাশক/পদক |
+ | ইংরেজি গ্রামার |
+ | Agreement & disagreement |
+ | Analogy for Bank & BCS |
+ | Changing sentence |
+ | Changing the form of word |
+ | Classification of noun -singular-plural |
+ | Gender |
+ | Gerund & participle & infinite |
+ | Group verb |
+ | Identification of clauses |
+ | Idioms & phrase |
+ | Parts of speech |
+ | Pin point Error |
+ | Preposition |
+ | Right form of verb |
+ | Sentence correction |
+ | spelling |
+ | Substitution Expression Definition |
+ | Synonym & antonyms |
+ | Tense & Conditionals |
+ | Translation |
+ | যত কনফিউশান প্রশ্ন (৩০ বছরের)Loading... |
+ | ইংরেজি সাহিত্য |
+ | কম্পিউটার ওপ্রযুক্তি |
+ | কারেন্ট অ্যাফেয়ার |
+ | গাানিতিক সমস্যা |
+ | অনুপাত |
+ | অনুপাত-সমানুপাত |
+ | অংশিদারী কার বার |
+ | গড় |
+ | গতিবেগ |
+ | চতুর্ভজ সংক্রান্ত সমস্যা |
+ | চৌবাচ্চায়/ কাজ/সময়/ |
+ | ত্রিভুজ সমস্য্যা |
+ | নৌকা ও স্রোত |
+ | বয়স |
+ | বর্গমুল |
+ | বাস্তব সংখ্যা |
+ | বিভিন্ন জ্যামতিকি কোন |
+ | বীজ গানিতিক সমস্যা |
+ | বৃত্ত সংক্রান্ত সমস্যা |
+ | ভগ্নাংশ |
+ | মিশ্রণ |
+ | ল সা গু ও গসা গু |
+ | লাভ ক্ষতি |
+ | শতকরা |
+ | সংখ্যা পদ্ধতি |
+ | সময় দুুরত্ব |
+ | সম্ভাবনা |
+ | সুদকষা |
+ | নিবন্ধন পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যাংক |
+ | 15 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান (কলেজ) |
+ | 15 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান (স্কুল) |
+ | 16 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান(কলেজ) |
+ | 16 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান(স্কুল-2) |
+ | 16 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান(স্কুল) |
+ | 17 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান (কলেজ) |
+ | 17 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান (স্কুল-2) |
+ | 17 তম নিবন্ধন প্রশ্ন সমাধান (স্কুল) |
+ | ১৮ তম শিক্ষক নিবন্ধন ২০২৪ কলেজ পর্যায় |
+ | প্রাইমারী স্কুল পরীক্ষার প্রশ্ন ব্যাংক |
+ | প্রথমিক শিক্ষক নিয়োগ 2023 প্রথম ধাপ সমাধান |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -১ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -১০ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -১১ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -১২ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -১৩ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -২ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৩ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৪ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৫ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৬ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৭ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৮ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৩ -৯ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৪-১ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৪-২ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৪-৩ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৪-৪ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৫-১ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৫-২ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৫-৩ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৫-৪ |
+ | প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৬ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-১ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-২ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৩ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৪ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৫ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৬ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৭ |
+ | প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১২-৮ |
+ | প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ 2023 দ্বিতীয় ধাপ সমাধান |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা -২০১৮-১ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা -২০১৮-২ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা -২০১৮-৩ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা -২০১৮-৪ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-১ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-২ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৩ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৪ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৫ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৬ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৭ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১০-৮ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১১-১ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১১-২ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১১-৩ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১১-৪ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-১ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-২ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৩ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৪ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৫ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৬ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৭ |
+ | প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা – ২০১৯-৮ |
+ | বাংলা ব্যকরণ |
+ | অব্যয় |
+ | উপসর্গ ও অনুসর্গ |
+ | কারক ও বিভক্তি |
+ | কাল পুরুষ ও কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ |
+ | ণ-ত্ব বিধান এবং ষ-ত্ব বিধান |
+ | দ্বিরুক্ত শব্দ |
+ | ধ্বনি ও বর্ন |
+ | ধ্বনি পরিবর্তন |
+ | পারিভাষিক শব্দ |
+ | প্রকৃতি ও প্রত্যয় |
+ | প্রবাদ প্রবচন |
+ | বচন |
+ | বাক্য শুদ্ধিকারন |
+ | বাক্য সংকোচন বা এক কথায় প্র্রকাশ |
+ | বাগধারা |
+ | বাংলা ব্যকরন গ্রন্থ |
+ | বাংলা ভাষার উদ্ভব বিকাশ ও ভাষা রীতি |
+ | বিপরীতার্থক শব্দ |
+ | ব্যঞ্জনধ্বনি ও ব্যঞ্জনবণ |
+ | যতি বা ছেদ চিহ্ন |
+ | যুক্ত বর্ণ |
+ | লিঙ্গ প্রকরণ |
+ | শব্দ |
+ | শব্দের শুদ্ধ অশুদ্ধ বানান |
+ | সন্ধি |
+ | সমার্থক শব্দ |
+ | সমাস |
+ | স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ |
+ | বাংলা সাহিত্য |
+ | আবু ইসহাক |
+ | আল মাহমুদ |
+ | ইতিহাস বিষয়ক প্রমান্য গ্রন্থ |
+ | ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর |
+ | কবি সাহিত্যিকদের উপাধি |
+ | কবি-সাহিত্যিকের ছদ্মনাম |
+ | কাজী নজরুল ইসলাম |
+ | কায়কোবাদ |
+ | জসীমউদদীন |
+ | জহরি রায়হান |
+ | জাহানারা ইমাম |
+ | জীবনান্দ দাশ |
+ | দীন বন্ধু মিত্র |
+ | দ্বিজেন্দ্রলাল রায় |
+ | নির্মলেন্দু গুহ |
+ | পত্রিকা ও সম্পাদক |
+ | প্যরীচাদ মিত্র |
+ | প্রমথ চৌধুরী |
+ | প্রাচীন সাহিত্য |
+ | ফররুখ আহমেদ |
+ | বঙ্কিম চন্দ্র |
+ | বাঙলা গদ্যের বিকাশ |
+ | বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক গ্রন্থ-অভিধান |
+ | বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিক গণ |
+ | বাংলা সাহিত্যের সকল প্রথম |
+ | বিখ্যাত উপন্যাস |
+ | বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক |
+ | বিখ্যাত কবিতা |
+ | বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ |
+ | বিখ্যাত চরিত্র উক্তি ও প্রবক্তা |
+ | বিভিন্ন আত্মজীবনী মুলক গ্রন্থ |
+ | বিভিন্ন বিষয়ের প্রবর্তক/মতবাদ/ধারনা |
+ | বিভুতিভুষন বন্দোপাধ্যায় |
+ | বেগম রোকেয়া |
+ | ভাষা আন্দোলন ও মুক্তি যুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস কবিতা কাব্য |
+ | মধ্য যুগের সাহিত্য |
+ | মাইকেল মধুসূদন |
+ | মানকি বন্দোপাধ্যায় |
+ | মীর মোসারফ হোসেন |
+ | মুনীর চৌধুরী |
+ | রচিয়তা |
+ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (সকল প্রশ্ন) |
+ | রাজা রাম মোহন রায় |
+ | শওকত ওসমান |
+ | শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
+ | শহীদুল্লা কায়সার |
+ | শামসুর রহমান |
+ | সুকান্ত ভট্টাচর্য |
+ | সুফিয়া কামাল |
+ | সুুকুমার রায় |
+ | সেলিনা হোসেন |
+ | সেলিম আদ দিন |
+ | সৈয়দ ওয়ালীউল্লা |
+ | সৈয়দ মুজতবা আলী |
+ | সৈয়দ সামসুল হক |
+ | হাসান হাফিজুর রহমান |
+ | হুমায়ুন আজাদ |
+ | হুমায়ুন আহমেদ |
+ | হুমায়ুন কবীর |
+ | বাংলাদেশ বিষয়াবলী |
+ | ইংরেজ শাসন |
+ | ক্ষদ্র নৃ গোষ্ঠী উপজাতি |
+ | জনসংখ্যা আদম সুমারি জাতি গোষ্ঠি উপজাতি |
+ | প্রাচীন শাষন ব্যবস্থা/সম্রাজ্য/বাংলার প্রাচীন জনপদ |
+ | বঙ্গবন্ধু ও শেখহাসিনা |
+ | বাংলদেশ কৃষি |
+ | বাংলাদের স্বাধীনতার স্বীকৃিত |
+ | বাংলাদেশ সংবিধান |
+ | বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ |
+ | বাংলাদেশের অর্থনীতি |
+ | বাংলাদেশের উন্নয়ন / প্রজেক্ট/ স্থাপনা |
+ | বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলি |
+ | বাংলাদেশের নদ-নদী |
+ | বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান |
+ | বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান |
+ | বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাাতিক দিবস |
+ | বিভিন্ন দেশত্ববোধক গানের/কবিতা/ গীতিকার ও সুরকার |
+ | ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ |
+ | মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচিত্র/উপন্যাস/ নাটক/ কবিতা |
+ | মুঘল সাম্রাজ্য |
+ | শিক্ষা নারী ও শিশু শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা |
+ | সুলতানি আমল |
+ | স্থাপত্য শিল্প ও ভাস্কর্য |
+ | বিভিন্ন মন্ত্রনালয় প্রশ্ন ব্যাংক |
+ | বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক |
+ | 10th BCS QUESTION BANK |
+ | 11th BCS QUESTION BANK |
+ | 12th BCS QUESTION BANK |
+ | 13th BCS QUESTION BANK |
+ | 14th BCS QUESTION BANK |
+ | 15th BCS QUESTION BANK |
+ | 16th BCS QUESTION BANK |
+ | 17th BCS QUESTION BANK |
+ | 18th BCS QUESTION BANK |
+ | 19th BCS QUESTION BANK |
+ | 20th BCS QUESTION BANK |
+ | 21th BCS QUESTION BANK |
+ | 22th BCS QUESTION BANK |
+ | 23th BCS QUESTION BANK |
+ | 24th BCS QUESTION BANK |
+ | 25th BCS QUESTION BANK |
+ | 26th BCS QUESTION BANK |
+ | 27th BCS QUESTION BANK |
+ | 28th BCS QUESTION BANK |
+ | 29th BCS QUESTION BANK |
+ | 30th BCS QUESTION BANK |
+ | 31th BCS QUESTION BANK |
+ | 32th BCS QUESTION BANK |
+ | 33th BCS QUESTION BANK |
+ | 34th BCS QUESTION BANK |
+ | 35th BCS QUESTION BANK |
+ | 36th BCS QUESTION BANK |
+ | 37th BCS QUESTION BANK |
+ | 38th BCS QUESTION BANK |
+ | 39th BCS QUESTION BANK |
+ | 40th BCS QUESTION BANK |
+ | 41th BCS QUESTION BANK |
+ | 42th BCS QUESTION BANK |
+ | 43th BCS QUESTION PAPER |
+ | 44th BCS QUESTION PAPER |
+ | 45 BCS QUESTION PAPER |
+ | ব্যাংক জব প্রশ্ন ব্যাংক |
+ | Assistant director 2021 MRA |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 10 – 03– 2006 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 15 – 02– 2008 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 18 – 05– 2001 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 18 – 06– 2004 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 24 – 09 – 2010 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Assistant Director Exam Date: 30 – 10 – 2009 |
+ | Bangladesh Bank Post Name: Officer Exam Date: 25 – 05– 2001 |
+ | ব্যাংক ম্যাথ |
+ | Average |
+ | Boat & stream |
+ | Chain Rule |
+ | Compound interest |
+ | Decimal fraction |
+ | HCF & LCM |
+ | Mixture & Allegation |
+ | Number system |
+ | Partnership |
+ | percentage |
+ | Permutation & Combination |
+ | Pipe-Cistern |
+ | Problem on Ages |
+ | Problem on train |
+ | Problem on uumber |
+ | Profit loss |
+ | Ratio & proportion |
+ | Simple interest |
+ | Simplification |
+ | Square roots |
+ | Time & Speed |
+ | Time & Work |
+ | Volume & surface area |
+ | মডেল টেস্ট ব্যাংক |
+ | জুন ২০২৩ |
+ | মডেল টেস্ট-ব্যাংক-1 |
+ | Exclusive model Test -p1 |
+ | Exclusive model Test P2 |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -B |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -C |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -D |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -E |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -F |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -G |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -H |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -I |
+ | প্রাইমারী মডেল টেস্ট -J |
+ | প্রাইমারী-মডেল টেস্ট -A |
+ | মডেল টেস্ট 2023-13 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-14 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-16 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-17 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-18 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-19 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-20 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-21 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-22 |
+ | মডেল টেস্ট 2023-23 |
+ | মডেল টেস্ট A1 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-1 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-10 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-11 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-12 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-15 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-2 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-3 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-4 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-5 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-6 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-7 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-8 |
+ | মডেল টেস্ট-2023-9 |
+ | মানসিক দক্ষতা |
+ | রিসেন্ট জব সল্যুশন |
+ | LGED WORK ASSISTANT |
+ | জাতীয় গোযেন্দা সংস্থা NSI |
+ | দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিঃ এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার |
+ | পদ: জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা তারিখ: ১৩/১২/২০২৩ |
+ | প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ 2023 দ্বিতীয় ধাপ সমাধান |
+ | প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ 2023 প্রথম ধাপ |
+ | বন অধিদপ্তর (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) |
+ | বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ BEZA এর সহকারী ব্যবস্থাপক |
+ | বাংলাদেশ ব্যাংক (ক্যাশ অফিসার ) |
+ | রেলওয়ের বুকিং সহকারী -গ্রেড-২ |
+ | সমবায় অধিদপ্তর এর সহকারী পরিদর্শক পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান- ২০২৩ |
+ | স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) হিসাব সহকারী |
+ | সাধারন জ্ঞান |
+ | সাধারন বিজ্ঞান |